পাতা:আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমার বোম্বাই প্রবাস وفي: لا বণিকদের বহিপূজনের দিন। তারা তাদের পুরাতন হিসাবপত্র গুটিয়ে দানধ্যান দেবাৰ্চনায় উৎসব সম্পাদন করে ও নবোৎসাহে নববর্ষের কার্য্যে প্রবৃত্ত হয় । ভক্ত-চুড়ামণি পবননন্দনের পূজা আমাদের দেশে প্রচলিত নাই কিন্তু মারাঠীদের মধ্যে খুবই চলিত ; এমন কি, মারুতি-মন্দির মারাঠী পল্লীচিত্রের এক প্রধান অঙ্গ। গণেশ ঠাকুরেরও মানমর্য্যাদা সামান্ত নহে। আমাদের দেশে গণেশ ঠাকুরের জন্তে স্বতন্ত্র উৎসব নাই, ওদিকে গণেশ চতুর্থীতে গণেশ পূজা ও বিসর্জন মহাসমারোহে সম্পন্ন হয়ে থাকে। দোলযাত্রার সময় ( হোলী ) আবীর থেলা আমোদ প্রমোদ সর্ব্বত্রই সমান। মহলার রাও গাইকওয়াড় এই খেলায় অত্যন্ত আসক্ত ছিলেন । প্রবাদ এই যে, তিনি একবার এক হাতীর উপর ক্ষুদ্র কামান বসিয়ে সেখান থেকে একদল নর্ত্তকীর উপর আবীর বর্ষণ করেছিলেন, সেই ভয়ঙ্কর পিচকারীর স্রোতে এক বেচারী প্রাণসঙ্কটে পড়েছিল । ভ্রাতৃ-দ্বিতীয়াকে বোম্বায়ে যম-দ্বিতীয়া কহে। ভাই বোনের মিলন ও সদ্ভাববৰ্দ্ধন এই উৎসবের উদ্দেশ্য। ভাই ভগিনী-গৃহে ভোজনে নিমন্ত্রিত হয়। ভগিনী ভায়ের কপালে তিলক দিয়ে তাকে বরণ করে, অনন্তর ধনরত্ন উপহার দানে ভগিনীর মেহের প্রতিদান ও পরিতোধসাধন করতে হয় । গান-বাজনা t বাঙ্গালীর। যেমন গান-বাজনাভক্ত আমি যতদূর দেখেছি মারাঠীরা তেমন নয়। বাঙ্গালী আমোদপ্রিয় সেখীন জাতি, মারাঠীদের প্রকৃতি অন্ততর। তারা ব্যবসায়ী practical লোক, কলাবিদ্যার প্রতি তাদের ততটা অনুরাগ নাই । আমার একজন মারাঠী বন্ধু বলেছিলেন—তিনি কলকাতায় গিয়ে দেখলেন বাঙ্গালীর অত্যন্ত তামাক ও সঙ্গীতপ্রিয়, যে বাড়ীতে যাও একটি হুক ও তানপুর । তাই বলে ও-দেশে যে গীতবাদ্যের চর্চা বা আদর নেই তা নয়। তবে আমার মনে হয় যে, সঙ্গীতবিষ্ঠা প্রায়ই পেশাদার লোকেদের মধ্যে বদ্ধ, ভদ্রলোকের মধ্যে গীতবাদ্যে সুনিপুণ অতি অল্প লোকই দেখা যায় । সামান্তত বলা যেতে পারে এদেশের গীতের আদর্শ হিন্দুস্থানী খেয়াল ধ্রুপদ । এই সাধারণ নিয়ম, স্থানে স্থানে রূপান্তরও দৃষ্ট হয়। মারাঠীদের মধ্যে সাকী, দিণ্ডি, অভঙ্গ প্রভৃতি কতকগুলি দিশী ছন্দে নুতন ধরণের গান ও তান শুনা যায়, আর “লাউনী’ নামক এক প্রকার টপ্পা আছে তাহাই খাট প্রাদেশিক জিনিস। আমাদের দেশের খোল কর্ত্তাল সমেত সঙ্কীর্ত্তনের মত সমবেত ধর্ম্মসঙ্গীত ও-দেশে শুনি নাই।