পাতা:আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস.pdf/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

4b. আমার বাল্যকথা নব নব ব্রহ্মসঙ্গীত মিলে সমাজে সাপ্তাহিক উপাসনার মধ্যে এক নূতন ত্র, নূতন প্রাণ সঞ্চারিত হ’ল । আমি এই সব নিয়ে মেতে তাছি এমন সময় মনোমোহন ঘোষ আমাদের বাড়ী অতিথি হয়ে থাকতে এলেন । যেন একটা বোমা আকাশ থেকে পড়ে সব ভেঙ্গে চুরে দিয়ে গেল । মনোমোহন ঘোষ মনোমোহনের সঙ্গে আমাদের পৈতৃক সম্বন্ধ । তার পিতা রামলোচন ঘোষ আমার পিতামহ দ্বারিকানাথ ঠাকুরের পরম বন্ধু ছিলেন, ঐ বন্ধুতা স্থত্রে মনোমোহনের সঙ্গে আমারও বন্ধুতা জন্মেছিল । একজন ইংরাজ মাষ্টার আমাদের পড়াতে আসতেন, তিনি Moatzatzo of arson, “An old head on young shoulders”—gat: ধড়ে বুড়ার মাথা । বাস্তবিক ও তাই । তিনি আমার চেয়ে কিছু ছোট ছিলেন, তার বয়স তখন ১৭ হবে অথচ Indian Mirror সাপ্তাহিক পত্রের সম্পাদকীয় ভার তিনি অকাতরে স্কন্ধে নিলেন। ঐ বয়সে তার মাথায় Civil Service পরীক্ষার কল্পনা খেলছিল। দুঃখের বিষয় এই যে তার মনের সাধ পূর্ণ হ’ল না। তিনি ভেবেছিলেন এক, বলবন্তর দৈব তাকে অন্ত দিকে নিয়ে গেল। আমার জীবনক্ষেত্র বোম্বাই, তার হ’ল বাঙ্গল দেশ ; আমার কর্ম্ম গবর্ণমেণ্টের চাকরী, তার স্বাধীন আইন ব্যবসা ; তিনি যে ক্ষেত্রে জয়লাভ করলেন সেই তার উপযুক্ত ক্ষেত্র, আমিও আমার উপযুক্ত কর্ম্মক্ষেত্র পেলুম। কেবল দুঃখ রইল আমাদের একযাত্রায় পৃথক ফললাভ ঘটল । আমাদেব বিলাত যাওয়া একরকম ঠিক হয়েছে এমন সময় আমর একদিন Botanical Garden-এ বেড়াতে যাই। পার হবার সময় একটা ষ্টিমারের ধাক্কায় আমাদের নৌকা উল্টে গেল। আমি সাতার জানতুম, নৌকার একভাগ কোনরকম করে আঁকড়ে ধরে রইলুম কিন্তু মনোমোহন নৌকার তলায় পড়ে হাবুডুবু খেতে লাগলেন, তার আর উদ্ধারের কোন উপায় ছিল না। শেষে অনেক ডাকাডাকির পর এক পানসীর মাঝি তাকে টেনে ওঠালে। আমরা কাউকে কিছু না বলে সেই ভিজে কাপড়ে আমাদের গম্য স্থানে চলে গেলুম—সেখানে কাপড় শুকিয়ে বেড়িয়ে চেড়িয়ে যথা সময়ে বাড়ী ফিরলুম। এই বৃত্তান্ত বাবামশায়ের কর্ণগোচর হওয়াতে আমাদের বিলাত যাওয়া বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল । তিনি বল্লেন, “তোমরা এখানেই আপনাদের আপনার সামলাতে পার না তোমাদের ঐ দূরদেশে পাঠান যায় কি করে ? তোমাদের কেউ সঙ্গী নেই, রক্ষক নেই, আপনার উপরে নির্ভর করেই যেতে হবে, তোমরা তা পেরে উঠবে কিনা এখন আমার সন্দেহ হচ্ছে।” বাস্তবিক ভেবে দেখতে গেলে আমরা