পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আ মা র বা ল্য ক থা
১৯

ঋষিপ্রতিম পিতা কখনই সে খাতা লয়ে রহস্য করেন নি নিশ্চয়ই। কিন্তু যখনই খৃষ্টধর্ম ও হিন্দুধর্মের সত্যতা ও শ্রেষ্ঠতা নিয়ে কারো সঙ্গে তর্ক বাধতো, দ্বারকানাথ তখনই সেই খাতাখানি প্রমাণস্বরূপ বের করতেন। অবশ্য আমি বলতাম যে, কোন দেশেরই ধর্মযাজকদের ব্যক্তিগত চরিত্রের উপর নির্ভর করে ধর্মের বিচার করা চলে না।

 দ্বারকানাথ প্যারিসে খুব জাঁকজমক সহকারে বাস করতেন। তখনকার রাজা লুই ফিলিপ কর্তৃক তিনি সমাদরে গৃহীত হয়েছিলেন। শুধু তা নয়—দ্বারকানাথ একদিন খুব সমারোহে সান্ধ্য-সম্মিলনের আয়োজন করেন, তাতে রাজা লুই ফিলিপ ও বহু উচ্চপদস্থ ব্যক্তিগণ সস্ত্রীক নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আসেন। দ্বারকানাথ সমস্ত ঘরখানি মূল্যবান কাশ্মীরি শাল দ্বারা সজ্জিত করেছিলেন! তখন কাশ্মীরের শাল ছিল ফরাসী স্ত্রীলোকদের একটা আকাঙ্ক্ষার বস্তু, সুতরাং কল্পনা কর যে তাদের কি অনির্বচনীয় আনন্দ হল, যখন এই ভারতের রাজপুত্রটি বিদায়কালীন প্রত্যেক স্ত্রীলোকের অঙ্গে একখানি শাল জড়িয়ে দিলেন।

 “ইংলণ্ডে বাসকালীন দ্বারকানাথ একটি মহা পুণ্যকর্ম করেন। ভারতের প্রধান ধর্ম সংস্কারক রাজা রামমোহন রায়ের ভস্ম ব্রিষ্টলের গোরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়েছিল; দ্বারকানাথ সেই স্থানের উপর সুন্দর মন্দির নির্মাণ করাইয়া দেন। হায়! তখন তিনি কল্পনাও করেন নি যে, অল্পকালের মধ্যে তাঁকেও এইরূপ বিদেশে প্রাণত্যাগ করতে হবে।


বেদ

 “আমার বড়ই আশ্চর্যবোধ হয় যে, যে দেশে বেদের মাহাত্ম্য এবং যা প্রধান ধর্মপুস্তক বলে গণ্য, সে দেশে কি না আজ পর্যন্ত বেদ ছাপানো হয়নি এবং সকলের তাতে অধিকারও নেই,