পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



 মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর উনবিংশ শতাব্দীর বাংলার রেনেসাঁর একটি স্মরণীয় নাম। নারীর জীবনকে বন্ধনমুক্ত করে তাকে পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে যাঁরা সমস্ত সামাজিক প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে কাজ করে গেছেন রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পরে তাদের অন্যতম হচ্ছেন সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন প্রথম ভারতীয় আই-সি-এস। কিন্তু আই-সি-এস বলতে যে ধরণের লোক আমাদের মনের চোখে ভেসে ওঠে সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা জাতের মানুষ। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় ও সাহায্যে যে হিন্দুমেলা ১৮৬১ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সে যুগের মনীষী ব্যক্তিরা—রাজনারায়ণ বসু, অক্ষয় দত্ত, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রভৃতি যুক্ত ছিলেন। হিন্দুমেলাই হচ্ছে জাতীয়তাবোধ উন্মেষ করবার প্রথম প্রচেষ্টা আমাদের দেশে। এই হিন্দুমেলায় সত্যেন্দ্রনাথ রচিত ‘গাও ভারতের জয়, হোক ভারতের জয়’ গানটি গীত হয়। এই গানটি সম্বন্ধে বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গদর্শনে লেখেন “সত্যেন্দ্রবাবু আর কিছু লিখুন বা না-ই লিখুন এই গানটিতে তিনি বঙ্গসাহিত্যে অমর হইয়া থাকিবেন। এই মহাগীত ভারতের সর্বত্র গীত হউক। হিমালয়-কন্দরে প্রতিধ্বনিত হউক। গঙ্গা, যমুনা, সিন্ধু, গোদাবরী তটে বৃক্ষে বৃক্ষে মর্মরিত হউক। পূর্ব-পশ্চিম সাগরের গভীর গর্জনে মন্দ্রীভূত হউক। এই বিংশতি কোটি ভারতবাসীর হৃদয়যন্ত্র ইহার সঙ্গে বাজিতে থাকুক।”

 সত্যেন্দ্রনাথ ছিলেন তেজস্বী, সত্যসন্ধ দেশপ্রেমিক পুরুষ। তার কর্মজীবন বাংলার বাইরে মহারাষ্ট্রে ও গুজরাটে অতিবাহিত হয়। মহারাষ্ট্রের মহামতি রাণাডে ও গুজরাটের ভোলানাথ সারাভাই প্রভৃতি চিন্তানায়ক ও সমাজ সংস্কারকরা তাঁর বন্ধু। বাংলার নব-জাগৃতি আন্দোলনের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের ও গুজরাটের নব-জাগরণের সংযোগ স্থাপনের মিলন সেতু ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ।