পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর (বড়দাদা)

 ছেলেবলায় বড়দাদা আমার সঙ্গের সঙ্গী ছিলেন, আমার কনিষ্ঠ ভ্রাতা হেমেন্দ্রনাথ প্রথম বয়সে আমাদের সঙ্গে সমকক্ষভাবে মেশবার অধিকারী ছিলেন না। বড়দাদা যখন খুব ছোট তখন থেকে তাঁর ছবি-আঁকার নৈপুণ্য ও কবিত্ব শক্তি প্রকাশ পায়—কিন্তু হায়! এই দুই বিদ্যার কোনটিই তাঁর জীবনে স্থায়ীভাবে কার্যকরী হল না। তাঁর বাল্যকালের কবিত্বোচ্ছাসে দুইটি কাব্যরত্ন প্রসূত হয়—মেঘদূতের পদ্যানুবাদ ও স্বপ্নপ্রয়াণ; তা ভিন্ন গুম্ফাক্রমণ কাব্য[১] ও অন্যান্য ছোট খাট কবিতা অনেক আছে যা সেই সময়কার ভারতী প্রভৃতি পত্রিক। খুঁজলে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু কি জানি কি কারণে, বাদে্গবী চপলা লক্ষ্মীর ন্যায় তাঁর নিকট হইতে সহসা অন্তর্ধান হলেন, বড়দাদা কাব্যামৃতপান হতে বিরত হয়ে তত্ত্ববিদ্যানুশীলনের দুরূহ চিন্তা ও ধ্যানে মগ্ন হলেন, চিত্রকলার চর্চাও ঐখানে থেমে গেল। তত্ত্বজ্ঞান আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে আর দুইটি সৌখিন কলা তাঁর মনোরাজ্য অধিকার করে বসল—বাক্সরচনা প্রণালী, আর রেখাক্ষর বর্ণমালা। এতে এত সময় নষ্ট করা হল কেন? জিজ্ঞাসা করলে বড়দা হেসে বলেন, এ শুধু ছেলেখেলা নয়, এ দুই বিদ্যা সাহিত্যেরই অঙ্গীভূত। লিখতে বসলে লেখবার নানা সরঞ্জাম চাই, কাগজ, কাগজ রাখবার বাক্স, পকেট বই— এই সকল সামগ্রী আগে থাকতে সংগ্রহ করতে হয়—তাই লেখাপড়ায় দিনকতক ক্ষান্ত দিয়ে বড়দা লেখবার জিনিষ তয়েরির কাজে মন দিলেন। একদিকে যেমন,


  1. পড়ে যেই লোক এই শ্লোক, পায় সে গুম্ফলোক ইহার পরে।
    যথা গুম্ফধারী ভারি ভারি, গোঁপের সেবা করি সুখে বিচরে॥

    ৺রাজনারায়ণ বসুর প্রতি লক্ষ্য করিয়া এই কাব্য রচিত হয়।