পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আ মা র বা ল্য ক থা
৫৩

ছিলাম—দোতালায় এসে পড়লুম। এই দোতালার বড়ীই আমাদের আদিম বসদ্বাটী, তেতালার বাড়ী নির্মাণ পরে হয়। বাড়ীর বাগান ভাগ হয়ে গেল, পুকুরটা বুঝি সাধারণ রইল। একদিন দেখি হাইকোর্টের একজন জজ এসে আমাদের বাড়ী তন্নতন্ন তদারক করে দেখে গেলেন, কি প্রণালীতে বিভাগ হবে তাই ঠিক করবার জন্যে। এই ছাড়াছাড়ি আমি অনেককাল ভুলতে পারিনি। ইংলণ্ড থেকে অনেক সময় দুঃখ করে মেজদাদাকে এই ধরণে পত্র লিখতুম। বাল্যকাল হতে আমরা একত্রে ছিলাম— তুমি ছিলে মেজদাদা আর এখনো পর্যন্ত আমার ছোটরা আমাকে সেজদাদা বলে ডাকে। আমাদের এক সঙ্গে ওঠাবসা, খ্যালাধূলা, আমোদ প্রমোদ, আমরা স্বপ্নেও ভাবি নাই যে আমাদের মধ্যে বিবাদ বিচ্ছেদ মতান্তর উপস্থিত হবে। কত কু-লোকের মন্ত্রণায় এক এক সময় এইরূপ সুখের সংসার ছারখার হয়ে যায়। যাহারা পরিবারের ভিতরে এইরূপ অশান্তির বীজ ছড়াইবার চেষ্টা করে তাহাদের মত দুর্মতি আর কে আছে? এক একবার দময়ন্তীর মত অভিশাপ দিবার ইচ্ছা হয়, যখন নলরাজ। তাঁহাকে অরণ্যে ফেলিয়া চলিয়া গিয়াছেন—

অপাপচেতসং পাপো য এবং কৃতবান্ নলং
তস্মাদ্ দুঃখতরং প্রাপ্য জীবত্বসুখজীবিকাং।

 “অপাপচিত্ত নলকে যে পাপাত্মা এইরূপ কার্যে প্রবৃত্ত করিল, সে তদধিক দুঃখতর জীবিকা পাইয়া জীবনধারণ করুক।”

 বিলেত থেকে ফিরে এসে বোম্বাই যাবার পর মেজদাদার সঙ্গে বড় আমার দেখা শুনো হত না কিন্তু আমাদের পত্র-ব্যবহার বন্ধ হয় নাই। ইংলণ্ড বোম্বাই আমি যেখানেই থাকি তাঁকে চিঠি লিখতুম আর তাঁর কাছ থেকেও স্নেহপূর্ণ পত্র পেতুম। ছুটিতে কলকাতায় এলে অবিশ্যি আমাদের ঘন ঘন দেখা সাক্ষাৎ হত। একবার আমি বাতরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় দেড় বৎসরের ব্যামোর