পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আ মা র বা ল্য ক থা
৫৭

বাড়ীর দালানে গুরুমশায়ের কাছে ক খ শিখতে আসত। গুরুমশায়ের কাছে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় হাতে খড়ি। সেই উগ্রচণ্ডা গুরুমশায় বেত্রহস্তে শেখাতে বসেছেন, কখনো বা সে বেত তাঁর কোন ছাত্রপৃষ্ঠে চালিত হচ্ছে—সে চিত্র মন থেকে কখনো যাবে না। আমরা গুরুমশায়কে কি মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত মনে করতুম—ঠিক যেন Goldsmith-এর সেই গ্রাম্য গুরুমশায়—

And still they gazed and still
The wonder grew
That one small head could
Carry all he knew.
অবাক হইয়া দেখে, না জানি কি করে
অত বিদ্যা ওই ক্ষুদ্র মাথার ভিতরে।

 আমরা গুরুমশায়ের কাছে ক খ, বানান নামতা, কড়াঙ্কে, ষটকে —এই সব শিখতুম, তাছাড়া চিঠিপত্র লেখা অভ্যাস করতুম। যত ওঁচা ফ্যালা, জিনিষ মোড়বার মত ব্রাউন কাগজ আনা হত, —শ্রীরামপুরের সাদা কাগজ যেদিন আসত খুব ভাগ্যি মনে করতুম। এই কাগজের উপর বাঙলা কলম দিয়ে আঁচড়কাটা— সেই আমাদের পত্রলেখা। যতদূর মনে আছে পত্রের দুই পাঠ ছিল—‘সেবক শ্রী’ আর ‘আজ্ঞাকারী শ্রী’— দিনের পর দিন বদলে বদলে এই দুই পাঠ লেখা হচ্চে। এখন দেখতে পাই বাঙলা চিঠিতে পাঠ লেখা বড় সহজ ব্যাপার নয়। বয়োজ্যেষ্ঠ গুরুজন, স্নেহের সম্পর্কীয় কনিষ্ঠ ছোট বড় আত্মীয় স্বজন বন্ধু, অপরিচিত দূরের লোক, formal informal!—বাংলায় কাকে কি পাঠ, ও কোন্ সময় কি পাঠ লিখতে হয় সে এক বিষম সমস্যা। গুরুমশায় এই বিষয় আমাদের মনোযোগ দিয়ে শেখালে ভবিষ্যতে অনেক কাজ দেখত। তবে ওরূপ মূর্খ পণ্ডিতের কাছে বেশী কিছু প্রত্যাশা করা অন্যায়, আমরা ঐ গুরুর কাছে লেখাপড়া বেশী দূর না এগিয়ে থাকি—নিদেন গোড়া পত্তন সেই।