পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পূজা

 আমাদের বাড়ী দুর্গা ও জগদ্ধাত্রী—এই দুই পূজা হত। দুর্গোৎসব মহাসমারোহে সম্পন্ন হত। আমাদের উঠানের উপর সামিয়ানা খাটানো আর তিন দিন ধরে নৃত্য গীত আমোদ প্রমোদ, আমাদের আনন্দের আর সীমা থাকতো না। সেই তিন দিন আমরা যেন কল্পনাপ্রসূত এক নূতন রাজ্যে বাস করতুম—নূতন দেশ, নূতন ঋতু, আলো বাতাস সব নূতন। প্রথমে যখন প্রতিমার কাঠাম নির্মাণ আরম্ভ হত তখন থেকে শেষ পর্যন্ত সমুদায় নির্মাণ-কার্য আমরা কৌতূহলের সহিত পর্যবেক্ষণ করতুম। আমাদের চোখের সামনে যেন ছোটখাট একটি সৃষ্টি কার্য চলেছে। প্রথমে খড়ের কাঠাম তার উপর মাটি, খড়ির প্রলেপ তার উপর রং, ক্রমে চিত্র বিচিত্র খুঁটি নাটি আর আর সমস্ত কার্য, সবশেষে অর্ধচন্দ্রাকৃতি চালের পরে দেবদেবীর মূর্তি আঁকা, তাতে আমাদের চোখের সামনে বৈদিক, পৌরাণিক দেবসভা উদ্ঘাটিত হত। ইন্দ্র চন্দ্র বায়ু, ব্রহ্মা বিষ্ণু মহেশ্বর, কৃষ্ণলীলা, রাম-রাবণের যুদ্ধ, কৈলাসে হর-পার্বতী, নন্দী ভৃঙ্গি, হনুমান ও গন্ধমাদন, বীণাহস্তে নারদ মুনি, গরুড়বাহন বিষ্ণু, বিষ্ণুর অনন্ত শয্যা, নৃসিংহ অবতার, কিন্নর-গন্ধর্ব-মিলিত ইন্দ্রসভা, গীতায় একাদশ সর্গে যেমন বিশ্বলোকের বর্ণনা আছে, আমাদের এই এই চর্ম চক্ষে সেই বিশ্বলোক আবিষ্কৃত হত। রাংতা দিয়ে যখন ঠাকুরদের দেহমণ্ডন, বসন ভূষণ সাজসজ্জা প্রস্তুত হত, আমাদের দেখতে বড়ই কৌতূহল হত। লক্ষ্মী সরস্বতীর চমৎকার বেশভূষা। লম্বোদর গজানন, গণেশ ঠাকুরের মূষিক তাঁর স্থুল দেহের আড়ালে লুকিয়ে থাকত; কিন্তু কার্তিকের প্যাখম-ধরা ময়ূরের যে বাহার তা কহতব্য নয়। কার্তিক ঠাকুরের অপূর্ব সাজসজ্জা তাঁর গুম্ফজোড়া আকৃতি, বেশভূষা, ফিনফিনে শান্তিপুরে ধুতি—দেখে মনে হত যেন