পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৬
আ মা র বা ল্য কা ল

তাতে আমার খুব উৎসাহ ছিল। ডনের পর ডন, বড় বড় মুগুর ভাঁজা—আর কত রকম কুস্তীর দাঁও, মার পেঁচ শিক্ষা। আমি কুস্তীতে একজন ওস্তাদ হয়ে উঠেছিলুম। কেউ আমার সঙ্গে সহজে পেরে উঠত না। হীরাসিংহের চ্যালাদের মধ্যে অনেক আমার সমবয়স্ক ছিল, তাদের সঙ্গে আমার কুস্তি হত—তাদের মধ্যে যারা বড় তাদেরও আমার কাছে হার মানতে হত; সহজে কেউ আমাকে ধরাশায়ী করতে পারত না। অথচ আমার বল যে বেশী তা নয়— এই কুস্তীতে শুধু বলীর জয় তা নয়, ছলে বলে কৌশলে যে কোন প্রকারে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করতে পারলেই জিৎ। একদিন কুস্তী করতে করতে বেকায়দায় পড়ে আমার হাত মুচকে গিয়েছিল। কাউকে কিছু না বলে সেটা ঢেকে রাখবার চেষ্টা করা গেল। আমার ওস্তাদের টোটকা ওষুধে সেরে যাবে এই ভেবে ছোলা ভিজিয়ে হাত বেঁধে রাখলুম; কিন্তু তাতে কোন ফল হল না। শেষে ডাক্তার সাহেবের রীতিমত চিকিৎসায় তবে আরাম হল। তখন থেকে সেবারকার মত আমার কুস্তী বন্ধ। এই সব বিষয়ে আমি অল্পেতে সন্তুষ্ট থাকতুম না, সবাই বলত “যা করবে সব তাতেই বাড়াবাড়ি— এ তোমার কেমন স্বভাব।” তার ফল ভোগও করতে হত—হাত পা ভাঙ্গা, মাথা ভাঙ্গা, কত বিপত্তি যে আমার উপর দিয়ে গিয়েছে তার অন্ত নেই। অথচ এখনো পর্যন্ত ত বেঁচে আছি। এত প্রকার বিঘ্ন বিপত্তির মধ্যে শিশুজীবন যে কি করে রক্ষা পায়, বিধাতার এ এক আশ্চর্য বিধান। সে যাহা হোক, একথা বলা যেতে পারে কোন বিষয়েরই বাড়াবাড়ি ভাল নয়’— এটা বড় ঠিক কথা। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রমে অনেক সময় উল্টা উৎপত্তিই হয়। তার সাক্ষী আমাদের ওস্তাদ হীরাসিং। তার কুস্তীর বিরাম নেই, যখনই দেখি কোন না কোন কঠোর ব্যায়ামে নিযুক্ত; কিন্তু তার শরীর বেশী দিন টিঁকল না, শীঘ্রই ভেঙ্গে পড়ল। শুনেছি এই সব পালোয়ানেরা দীর্ঘজীবী হয় না। শরীর রক্ষা করতে হলে আহার