পাতা:আমার বাল্যকথা - সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৮
আ মা র বা ল্য ক থা

শরীর যদিও যাবে, মন সদা হেথা রবে,
যার ধন তারি কাছে রবে অনুক্ষণ।
দিবস ফুরায় যত, ছায়া যায় দূরে তত,
কভু না ছাড়য়ে তবু পাদপ-বন্ধন॥

 আমার পথের সমুদায় বিঘ্নবাধা অতিক্রম করে ভালয় ভালয় আমাদের গম্যস্থানে গিয়ে পৌঁছলুম, আমাদের জাহাজ Southampton বন্দরে নোঙর করবামাত্র আমার আত্মীয় জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঠাকুর[১] আমাদের নিতে এলেন। আমরা তাঁর সঙ্গে লণ্ডনে গিয়ে তাঁর বাড়ীতে উঠলুম। তাঁর স্ত্রী কমলা ও দুই কন্যা আমাদের সাদরে অভ্যর্থনা করে ডেকে নিলেন। তাঁদের অতিথি হয়ে কিছুকাল সুখে কাটান গেল। তাঁদের বাড়ী খৃষ্টমিসনরিদের এক আড্ডা ছিল, তা ছাড়া সেখানকার অন্যান্য লোকদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করবার সুবিধা পেলুম। সেখান Hodgson Pratt নামক ভারতহিতৈষী মহাত্মার সঙ্গে আমাদের পরিচয় হল, তিনি অভিভাবকের ন্যায় আমাদের অত্যন্ত যত্ন করতেন। তাঁরই পরামর্শে আমরা মাসকতক পরে Windsor-এর নিকটবর্তী একটি পল্লীতে এক সম্ভ্রান্ত ইংরাজ পরিবারের মধ্যে বাস করে আমাদের পরীক্ষার উপযোগী পাঠাভ্যাসে নিযুক্ত রইলাম। গৃহটি ছাত্রাবাস ধরণের স্থান, আমরা ছাড়া আরো কয়েকজন ছাত্র ছিল। যিনি গৃহস্বামী তিনি আমাদের ইংরাজী শিক্ষক; সংস্কৃত, আরব্য, ফ্রেঞ্চ প্রভৃতি অন্য বিষয়ের জন্য অন্যান্য শিক্ষক নিযুক্ত ছিল। Dr. G. একজন রুক্ষ্ম প্রকৃতির লোক ছিলেন, তাঁর স্ত্রীও সেইরূপ মুখরা। বুড় বুড়ীর মধ্যে যে খুব বনিবনাও ছিল তা নয়, মাঝে মাঝে প্রায়ই খিটিখিটি চলত। তাঁদের কন্যারত্ন—একটি প্রাপ্তবয়স্কা কুমারী গৃহের শ্রীস্বরূপা ছিলেন, তিনি অনেক পরিমাণে এই অশান্তির প্রতিবিধান করতেন। আমাদের পড়ার মাঝে যা কিছু সময় থাকত তাঁরই সংসর্গে কাটাতুম।


  1. ইনিই প্রথম বাঙ্গালী ব্যারিস্টার, অনেকে হয়ত তা জানেন না!