পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এ দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশ টিকিয়ে রেখেছে অসাম্যের সমাজ-ব্যবস্থা। এ সমাজে খাটতে চাইলেও পাওয়া যায় না কাজের গ্যারাণ্টি। চিকিৎসার সুযোগ, লেখা-পড়ার সুযোগ সংবিধানের পাতাতে শুধু ছাপাই থাকে। ভাত-কাপড়-পানীয় জল ও মাথা গোঁজার ঠাঁই প্রতিটি নাগরিককে দেবার যে সংকল্প সংবিধানে রয়েছে, তার খবরই জানে না দেশের নিরন্ন মানুষগুলো। ওরা আগাছার মতই বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকে সমাজের সমস্ত বঞ্চনা ও অবহেলার মধ্যে। যে বয়সে আপনার আমার বাড়ির শিশু লজেন্স চোষে, সেই বয়সে ওদের বাড়ির শিশু চলন্ত ট্রেনে লজেন্স ফেরি করে। যে বয়সে গাড়ি চেপে আপনার আমার বাড়ির শিশু ফিটফাট পোশাকে স্কুলে যায়, সে বয়সে ওদের বাড়ির শিশু কালি-ঝুলি মেখে মটোর- গ্যারেজে গাড়ি সারাবার ‘ফালতু'। লোডশেডিং নিয়ে যখন আপনি আমি এবং আমাদের পত্রিকাগুলো গলা ফোলাচ্ছে, তখন ওরা অদ্ভুত নির্বিকার। মুক্ত আকাশের নীচে ফুটপাতে বা পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট বস্তির ঘরে দশটা মানুষের স্তুপ। আলো বলতে ফুটপাতে স্ট্রিটলাইট, পাঁচ ফুট বাই পাঁচ ফুট ঘরে কুপি। কুপি জ্বলে, তবে অনেক হিসেব কষে। আলোই যে দেখেনি, তার আবার আলো হারাবার ভয় কী? হাওয়াই যে পায়নি, তার হাওয়া হারাবার ভয় কী? ওরা অন্ধকার জগতের অনেক কেষ্ট-বিষ্টুদের দাবার ঘুঁটি। ওরা ফালতু-পালতু। কেষ্ট-বিষ্টুদের ইশারায় প্রাণ দেওয়া নেওয়ার খেলায় মাতে। ওরা একদিনে তৈরি হয়নি। আর্থ-সামাজিক অবস্থা ওদের একটু একটু করে তৈরি করেছে।

 যে দেশে সর্বোচ্চ পদ থেকে বইতে শুরু করে দুর্নীতির স্রোত, যে দেশে হত্যাকারী, ধর্ষক, গুণ্ডা, ছেনতাইবাজ, ডাকাত, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার দরুন শুধু পারই পায় না, বরং বুক চিতিয়ে ঘুরে বেরাবার ছাড়পত্র পায়, নেতা হবার সুযোগ পায়, সে দেশের মানুষ দু-বেলা ঠাকুর প্রমাণ সেরে, নামাজ পড়েও দুর্নীতি চালিয়ে যাবেই; এবং যাচ্ছেও তা। এই তো ধর্মপ্রাণ, ঈশ্বর-বিশ্বাসী ভারতের সামাজিক অবস্থা।

O

যে দেশে সর্বোচ্চ পদ থেকে বইতে শুরু করে দুর্নীতির স্রোত, যে দেশে হত্যাকারী, ধর্ষক, গুণ্ডা, ছেনতাইবাজ, ডাকাত, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকার দরুন শুধু পারই পায় না, বরং বুক চিতিয়ে ঘুরে বেরাবার ছাড়পত্র পায়, নেতা হবার সুযোগ পায়, সে দেশের মানুষ দু-বেলা ঠাকুর প্রমাণ সেরে, নামাজ পড়েও দুর্নীতি চালিয়ে যাবেই; এবং যাচ্ছেও তা।

O

 এই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের এমন কিছু শেখাবার চেষ্টা করে চলেছে, যা অন্ধবিশ্বাস নির্ভর, যা অর্ধসত্য, যা একপেশে, যা অধ্যাত্মবাদী ও ভোগবাদী মতবাদের পরিপোষক, যা ক্যারিয়ারিজিমের আঁতুড়ঘর, যা অসাম্যের সমাজ কাঠামোকে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক। এই শিক্ষা ব্যবস্থায়

১০৪