পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জনমানসের এমন উত্তরণ একদিনে ঘটেনি। এটা একটা হয়ে ওঠার ব্যাপার। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠার ব্যাপার। আমজনতার একটা অংশ যুক্তিবাদী চিন্তাধারার সঙ্গে একটু একটু করে পরিচিত হতে হতে কুসংস্কার বিরোধী হয়ে উঠেছেন। এই হয়ে ওঠার ব্যাপারে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির লাগাতার প্রক্রিয়া ও অবদানকে স্বীকার না করে কোনও উপায় নেই। জনতার চাহিদা আছে। বিক্রি হবে। তাই প্রচার-মাধ্যমগুলো তাদের মালিকের শ্রেণীস্বার্থকে সংরক্ষিত রেখে নানা সাজে বিক্রি করছে প্রগতিশীলতা। কারণ প্রতিটি প্রচার-মাধ্যমই শেষ পর্যন্ত একটা ব্যবসা। আর পাঁচটা ব্যবসার মতই।

প্রচার-মাধ্যমগুলোর নীতি নির্ধারণ করেন মালিক। মালিক প্রগতিশীলতা ও কুসংস্কার বিরোধিতাকে ততদূর পর্যন্তই এগিয়ে নিয়ে যাবে, যতদূর নিয়ে গেলে এই অসাম্যের সমাজ কাঠামোর গায়ে আঁচটি লাগবে না। তাই গণেশের দুধ খাওয়া বা গ্রহণের ব্যাপার নিয়ে 'কাস্টমার'দের উত্তেজনার আগুন পোহানর ঢালাও ব্যবস্থা রাখলেও নিয়তিবাদ—অধ্যাত্মবাদ—ঈশ্বরবাদ বিষয়ে জনচেনতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে না। কারণ বঞ্চিত মানুষদের চিন্তাকে বিভ্রান্ত করতে এই তিন ‘বাদ’-এর জবাব নেই। পরিবর্তে আসবে নানা অজুহাত, কূটকচালি—জনগণের বিশ্বাসকে আঘাত দেওয়া কতটা অযৌক্তিকতা-বোঝাবার নানা চেষ্টা। তার চেয়ে থাক না কিছু বিশ্বাস, আপন মনে, সঙ্গোপনে!

যুক্তিবাদী আন্দোলনের তরীতে জোয়ারের টান। পালে সুচেতনার দখিনা হাওয়া। তরতর চলমান আমজনতার প্রগতিশীল অংশ। সমাজ-কাঠামোর স্তম্ভগুলোয় নোনা ঢেউয়ের লাগাতার আঘাত। স্তম্ভের ফাটল রেখা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। সারাইয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতা। ময়দানে এখন বেশ কিছু 'যুক্তিবাদী' সংগঠন, 'যুক্তিবাদী' শব্দটা তো কারও একচেটিয়া নয়! 'ভাল্লাগে তাই ওমনি এমনি ব্যবহার করি'—বললে কারও প্রত্যুত্তর দেওয়ার কিছু থাকে না। আমাদেরও নেই। এদের কাউকে ‘স্পনসর' করছে রাষ্ট্রশক্তি, কাউকে বা বিদেশের ধনকুবেররা। সাম্যের সমাজ গড়ার লড়াই চালাবার অধিকার কারও একচেটিয়া নয়। রাষ্ট্রশক্তি ও তাদের চালিকা শক্তি ধনকুবেররা যদি রাজ্য-পাট-ছেড়ে আমজনতায় সামিল হতে চায়—কারও কিছু বলার থাকতে পারে না। আমাদেরও নেই। 'ভাল্লাগে তাই’ ও ‘স্পনসর পাওয়া' যুক্তিবাদীদের অনেকের উপরই প্রচার-মাধ্যমের 'স্পট-লাইট'। কাকে আলোকিত করবে, তা নির্বাচন করার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রচার-মাধ্যমগুলোর আছে। কারও কিছু বলার থাকতে পারে না। আমাদেরও নেই।

কিন্তু প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আপনারও অধিকার আছে ‘সাদা'কে 'সাদা' ও 'কালো’কে 'কালো' বলার। আপনার অধিকার আছে অজুহাতের ঘেরাটোপে

১১