পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিবেচনায় মনুষ্যত্বের ও মানুষের চরম শত্রু মনু বিধান দিলেন তাঁর বিখ্যাত মনুসংহিতায় [২ঃ৬৭]:

বৈবাহিকো বিধিঃ স্ত্রীণাং সংস্কারো বৈদকঃ স্মৃতঃ।
পতিসেবা গুরৌবাসো গৃহার্থোহাগ্নি পরিক্রিয়া।

 অর্থাৎঃ

বিয়েই নারীর বৈদিক উপনয়ন।
পতিসেবাই গুরুগৃহবাস, গৃহকর্মই হোমস্বরূপ অগ্নিপরিচর্যা॥

 বিধানের এখানেই শেষ নয়। মনু আরও বলেছেন (৫ঃ১৫৪), পতি সদাচারহীন, পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কযুক্ত বা গুণহীন হলেও সতী স্ত্রী সেই পতিকে দেবতার মতই পুজো করবে।

 তাহলে হিন্দু নারীর বিনোদন কি শুধুই নানা ব্রতপালন ও উপবাস ঘিরেই আবর্তিত হবে?

 না, ব্রতপালন, উপবাসের স্বাধীনতা নারীকে দেননি মনু! তাঁর বিধানে আছে (৫:১৫৫: স্ত্রীর স্বামী ছাড়া পৃথক যজ্ঞ নেই, পতির অনুমতি ছাড়া ব্রত বা উপবাস নেই। নারী স্বর্গে যেতে পারে কেবলমাত্র স্বামী-সেবার সাহায্যেই।

 হিন্দু সমাজে পুরুষরা এভাবে নিজেদের লাম্পট্য, অসদাচরণ ও অত্যাচারকে নারীদের কাছে শুধুমাত্র প্রতিবাদহীনভাবে গ্রহণীয় করেনি, নিজেদের দেবতার আসনে বসিয়েছে ধর্মের বিধান খাড়া করে।

 হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন বিধানে পদে পদে পুরুষের লাম্পট্যকে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। পুরুষের লাম্পট্যকে নীতিগতভাবেই গ্রহণ করা হয়েছে। তৈত্তিরীয় সংহিতায় ৬/৬/৮৫ বলা হয়েছে, “যজমান, দীক্ষার দিনে গণিকাসাহচর্য বর্জন করবেন, তার পরদিন পরস্ত্রীর সাহচর্য এবং তৃতীয় দিন নিজ স্ত্রীর সাহচর্য বর্জন করবেন।” অর্থাৎ দীক্ষার দিনেও পরস্ত্রীর সাহচর্য বৈধ ছিল। দীক্ষার দিন ছাড়া অন্যান্য দিন গণিকা গমনও বৈধতার ছাড়পত্র পেয়েছিল এবং গণিকাগমন পুরুষের কাছে কখনই দোষনীয় বা লজ্জার বলে চিহ্নিত হয়নি। বরং চিহ্নিত হয়েছিল পৌরুষের প্রতীক হিসেবেই।

 মনুসংহিতায়, অর্থাৎ মনুর বিধানে (৯ঃ৪] বলা হয়েছে, নিঃসন্তান স্ত্রীকে বিয়ের দশ বছর পর ত্যাগ করা যায়, যে স্ত্রী শুধুমাত্র কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় তাকে ত্যাগ করা যায় বারো বছর পরে, মৃত সন্তানের জন্মদানকারী স্ত্রীকে তাগ করা যায় পনের বছর পরে।

 সন্তানের জন্ম দেওয়ার অক্ষমতার কারণে স্বামীকে কিন্তু ত্যাগ করার কোনও বিধান নেই হিন্দু শাস্ত্রে।

 মনু [৯ঃ৪] ঝগড়ুটে স্ত্রীকে তক্ষুনি ত্যাগ করার অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু ঝগড়ুটে শুধু নয়, অত্যাচারী স্বামীকেও দেবতা জ্ঞানে পুজো করতে বলেছেন

১১৪