আমাদের দেশের মানুষদের প্রধান ধর্ম ইসলাম ও হিন্দু বলে এই দু'টি ধর্ম নিয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রেখেছি। অন্য প্রধান ধর্মগুলোতেও একইভাবে পুরুষ দ্বারা নারীকে অবদমিত রাখার ষড়যন্ত্র ব্যাপকভাবেই উপস্থিত।
ভারতে বর্ণাশ্রম সৃষ্টি করেছিল মনুর দেওয়া ধর্মীয় অনুশাসন। মনু সংহিতা'য় মনু বললেন:
লোকানান্তু বিবৃদ্ধার্থং মুখবাহুরুপাদতঃ।
ব্রাহ্মণং ক্ষত্রিয়ং বৈশ্যং শুদ্রঞ্চ নিরবর্তয়ৎ॥ [১:৩১]
অর্থাৎ, পৃথিবীর মানুষদের সমৃদ্ধি কামনায় পরমেশ্বর নিজের মুখ, বাহু, উরু ও পা থেকে যথাক্রমে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র—এই চার বর্ণ সৃষ্টি করলেন।
ব্রাহ্মণদের কাজ তথা ধর্ম হল—অধ্যাপন, অধ্যয়ন, যজন, যাজন, দান, ও প্রতিগ্রহ, এই ছয়টি। [১:৮৮]
ক্ষত্রিয়দের কাজ তথা ধর্ম—প্রজারক্ষণ, দান, যজ্ঞ, অধ্যয়ন, ভোগাসক্তি নিয়ন্ত্রণ। [১:৮৯]
বৈশ্যদের ধর্ম—পশুরক্ষণ, দান, যজ্ঞ, অধ্যয়ন, বাণিজ্য, ধনবৃদ্ধির জন্য ধনপ্রয়োগ ও কৃষিকার্য পরিচালন। [১:৯০]
শুদ্রদের কাজ বা ধর্ম—
একমেব তু শূদ্রস্য প্রভুঃ কর্ম্ম সমাদিশৎ।
এতেষামেব বর্ণানাং শুশ্রূষামনসূয়য়া॥ [১:৯৯]
অর্থাৎ, ক্ষুণ্ণ না হয়ে, প্রসন্নমনে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের সেবা করা শূদ্রগণের প্রধান কর্তব্য, এই নির্দেশ ব্রহ্মা দিলেন।
‘শূদ্র' নামের এই দাসদের পারিশ্রমিক বা বেতন দিতে হত না। দেবার প্রশ্নই নেই। মনু বলেছেন-দাসত্বের কাজ নির্বাহ করার জন্য বিধাতা শূদ্রকে সৃষ্টি করছেন—“দাস্যায়ৈর হি সৃষ্টোহসৌ ব্রাহ্মণস্য স্বয়ম্ভুবা” [৮:৪১৩]। কিন্তু দাসদের বাঁচিয়ে তো রাখতে হবে, বেগার খাটাবার জন্যেই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শিল্প ও কৃষির দ্বারা নিজেদের ভোগকে চরিতার্থ করার জন্য এইসব শিল্প দাস ও কৃমিদাসদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেইজন্য মনু বিধান দিয়েছেন—শূদ্রভৃত্যকে উচ্ছিষ্ট অন্ন, জীর্ণ বসন, জীর্ণ শয্যা বা ঘর দান করিবে [১০:১২৫]।
১২০