পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

  এই অশুভ আঁতাতের কথা আমার কল্পনাপ্রসূত নয়। মনুর শ্লোকেই এর হদিস পাবেন। মনুসংহিতার ৯ম অধ্যায়ের ৩২২ নম্বর শ্লোকে মনু বলেছেন—

না ব্রহ্মক্ষন্দ্রমধ্নোতি নাক্ষদ্রং ব্রহ্ম বর্দ্ধতে।
ব্রহ্ম ক্ষন্দ্রঞ্চ সম্পৃক্তমিহ চামুত্র বর্দ্ধতে॥

  অর্থাৎ, ব্রাহ্মণহীন ক্ষত্রিয় কখনও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হন না; ক্ষত্রিয় ব্যতিরেকে ব্রাক্ষণও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হন না; ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণ মিলিত হলে উভয়েরই শক্তিবৃদ্ধি হয়।

 ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়, এই দুই বর্ণের মিলন নিজ নিজ ধর্মের স্বার্থেই অতি প্রয়োজনীয় বলে যে নির্দেশ প্রাচীনকালে মনু দিয়েছিলেন, সেই নির্দেশকে আজও মান্য করেই চলেছে চলমান ধর্ম ও রাজনীতির অশুভ আঁতাত।

O

ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়, এই দুই বর্ণের মিলন নিজ নিজ ধর্মের স্বার্থেই অতি প্রয়োজনীয় বলে যে নির্দেশ প্রাচীনকালে মনু দিয়েছিলেন, সেই নির্দেশকে আজও মান্য করেই চলেছে চলমান ধর্ম ও রাজনীতির অশুভ আঁতাত।

O

  ধর্মকে মানবিক বলে লাগাতার প্রচারের যে চেষ্টা বর্তমানে ব্যাপকতা পেয়েছে, তা শোষণের রাজনীতিকে পালন ও পুষ্ট করার স্বার্থে একান্তভাবেই অন্তঃসারশূন্য প্রচার মাত্র, মিথ্য প্রচার মাত্র।

প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম না থাকলে কি সমাজ উচ্ছন্নে যাবে?

 ধর্মের মূলগত অনুশাসনগুলোই যেখানে শোষণব্যবস্থা বজায় রাখার সহায়ক, মানুষের দ্বারা মানুষকে অবদমিত করে রাখার সহায়ক, সেখানে এই আচরণবিধিগুলোর অনুসরণ কোনওভাবেই আদর্শ জীবনের সহায়ক হতে পারে না। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মনির্দেশিত এই ‘way অফ life’ কোনও ভাবেই মানুষ হয়ে ওঠার দিশারি হতে পারে না।

  এরপরও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত বহু মানুষ বলবেন—ধর্ম না থাকলে মানুষ নীতিজ্ঞান বিসর্জন দিয়ে সমাজকে উচ্ছন্নে নিয়ে যাবে। এই ধরনের বক্তব্য বেশ কয়েকটি কারণে একান্তভাবেই অন্তঃসারশূন্য।

O

দেশের সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষিত হয় আইন সৃষ্টি ও তার প্রয়োগ দ্বারা। শাস্ত্রের বিধান দ্বারা নয়।

O

 কারণঃ এক—দেশের সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষিত হয় আইন সৃষ্টি ও তার প্রয়োগ দ্বারা। শাস্ত্রের বিধান দ্বারা নয়। ‘গণতান্ত্রিক দেশ’ বলে পরিচিত দেশগুলো বাস্তবে জনগণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে ধনকুবের গোষ্ঠীর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়!

১২২