পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এক বিরাট বিস্ফোরণ ঘটেছিল। সেই বিস্ফোরণ ‘বিগ ব্যাং’ নামে খ্যাত। বিস্ফোরণের পর প্রথম তিন মিনিটের মধ্যে যা ঘটেছিল, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গোটা ইতিহাসে আর কখনও তা ঘটেনি। বিশ্বসৃষ্টির রহস্য ঐ তিন মিনিট সময়ের মধ্যেই ধরা আছে। তখনই প্রকৃত অর্থে বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল; আজকের বিশ্বে আমরা যা-কিছু দেখি তার বীজ সৃষ্টি হয়েছিল তখন। তখন নিউক্লিয়ন ইত্যাদি বহু কণিকা গঠিত হয়েছিল এবং কণিকাগুলো পরস্পরের উপর ক্রিয়া করতে আরম্ভ করেছিল। এই যে পারস্পরিক ক্রিয়া, বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে মিথষ্ক্রিয়া। বহুকাল ধরে বিভিন্নভাবে এই মিথষ্ক্রিয়া হওয়ার ফলে বিভিন্ন পদার্থের সৃষ্টি। এইভাবেই আস্তে আস্তে উদ্ভিদ, পশু, পাখি, মানুষ, প্রভৃতি জীব সৃষ্টি হয়েছে।

 “ঐ যে ‘বিগ ব্যাং’-এর পর নিউক্লিয়ন ইত্যাদি কিছু কণিকা সৃষ্টি হয়েছিল, সে তো শূন্য থেকে হয়নি। নিশ্চয় কিছু ছিল যা থেকে হয়েছিল। কারণ, বিজ্ঞানের গোড়ার কথাই হল—Matter cannot be created nor can it be destroyed। শুধু ম্যাটার নয়, এনার্জির বেলায়ও এই কথা। তাহলে দেখা যাচ্ছে, ম্যাটার আর এনার্জি বিশ্বসৃষ্টির আগেও ছিল, বিশ্ব যদি কোনোদিন ধ্বংস হয়ে যায় তখনও থাকবে। তবে আজ যেভাবে আছে সেইভাবে হয়তো থাকবে না। হয়তো আবার ‘ব্ল্যাক হোল’-এর মতো একটা কিছু হয়ে ম্যাটার-ট্যাটার সব এক জায়গায় জড়ো হয়ে যাবে, যেমন দেড় হাজার কোটি বছর আগে ‘বিগ ব্যাং’-এর আগে ছিল। তার মানে, ম্যাটার আর এনার্জি আগেও ছিল, পরেও থাকবে—চিরকালই থাকবে। কেবল রূপ বদলাবে হয়তো।

 “ম্যাটার আর এনার্জির আলটিমেট ইউনিট হচ্ছে প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি মৌলিক কণা আর ফোটন। আগেই বলেছি, ম্যাটার হচ্ছে কিছু অ্যাটমের সমষ্টি। অ্যাটমের আবার নিজস্ব জগৎ আছে। তার মধ্যে ইলেকট্রন আছে, নিউক্লিয়ন আছে। নিউক্লিয়নের মধ্যেও আবার অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সব কণিকা আছে। ম্যাটার আর এনার্জি ডিফরাণ্ট ইউনিটে, ডিফারেণ্ট লেভেলে এবং ডিফারেণ্ট ফর্মে অর্গানাইজ্ড্ হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে অর্গানাইজ্ড্ হয়ে যখন একটা নতুন অ্যাটম তৈরি হচ্ছে তখন তার নতুন ধর্ম দেখা যাচ্ছে। এইভাবে কতকগুলো অ্যাটম মিলে মলিকিউল তৈরি হল। আবার কতকগুলো-মলিকিউল মিলে ম্যাক্রো-মলিকিউল তৈরি হল। কতকগুলো ম্যাক্রো-মলিকিউল মিলে টিস্যু আর অর্গ্যান তৈরি হল। তারপর বিভিন্ন অর্গ্যান মিলে একটা অর্গানিজম তৈরি হল।

 “অর্গানিজ্‌ম্‌ মানে জীব। তা সে উদ্ভিদও হতে পারে, প্রাণীও হতে পারে। প্রথমে উদ্ভিদের সৃষ্টি। তারপর প্রাণীর। পৃথিবীতে জীবসৃষ্টির পর দুটি ধারায় জীবজগৎ বিভক্ত হয়ে গেল—একটি উদ্ভিদজগৎ আর একটি প্রাণিজগৎ। উদ্ভিদজগৎ আর প্রাণিজগৎ মিলে জীবজগৎ।

 “সৃষ্টির এই যে তত্ত্ব, বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘ইভলুশনিজ্‌ম্‌’ অর্থাৎ

১২৯