পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বলাই বাহুল্য, স্টিফেন ভাইনবার্গের পরিচিত বিজ্ঞানীদের বৃত্তটা স্বাভাবিকভাবেই সাংঘাতিক রকমের বড় এবং পৃথিবী জুড়ে। প্রসঙ্গত এটুকুও জানিয়ে রাখা ভাল, তাঁর পরিচিত বিজ্ঞানীদের ধর্ম ও ঈশ্বর বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে তিনি খুবই উৎসাহী ছিলেন। জানার ক্ষেত্র হিসেবে তিনি কাজে লাগাতেন সাধারণভাবে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে লাঞ্চ টেবিলের আড্ডা বা চায়ের আড্ডা। স্টিফেন ভাইনবার্গের নিজের কথায়, “এইসব নিয়ে (অর্থাৎ ধর্ম ও ঈশ্বর নিয়ে) মাথা ঘামানোর ব্যাপারে আমি বোধহয় আজকের বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটু ব্যতিক্রমী” (ঐ বইয়ের ঐ পৃষ্ঠাতেই)।

 প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, একবার ভাবুন তো, অতি সাম্প্রতিককালে কী এমন ঘটল যে প্রচার-মাধ্যম ও তাঁদের ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীরা ঈশ্বরে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের বক্তব্যগুলোকে বার বার বিশাল করে প্রচারের আলোকে আনতে লাগল? এমন কী ঘটল যে এদেশের ঈশ্বরে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীদের খুঁজে বের করে ঈশ্বর বিশ্বাসের পক্ষে তাঁদের যুক্তিকে লাগাতারভাবে হাজির করতে শুরু করেছে প্রচার মাধ্যমগুলো? এ'দেশের নাক উঁচু পাক্ষিক পত্রিকা, সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিক এ জাতীয় প্রচারকে এমনই তুঙ্গে নিয়ে গেছে যে তার প্রভাবে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কলম ধরা লেখকরা সাধারণভাবে গ্রহরত্নধারী, ঈশ্বরের নামে কপালে হাত ঠেকানো ডাক্তার বা বিজ্ঞানীদের প্রবল উপস্থিতির কথা তাঁদের লেখায় প্রায়ই নিয়ে আসছেন। বাস্তব চিত্রটা কিন্তু সম্পূর্ণ অন্য রকম। এ দেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যেও ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা সংখ্যালঘু। আমার কাছে নির্ভরযোগ্য কোনও পরিসংখ্যান নেই। তবে আছে অভিজ্ঞতা। আন্দোলনের সূত্রে বিজ্ঞানীমহলে পরিচিতির যে বৃত্ত, সেখানে দেখেছি, ঈশ্বর বিশ্বাসী বিজ্ঞান পেশার মানুষরা স্পষ্টতই সংখ্যালঘু। কী এমন হল যে, ঈশ্বর বিশ্বাসের পিঠে বিজ্ঞানের পাখা জুড়ে দিতে অতিসাম্প্রতিককালে প্রবলভাবে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রশক্তি, রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রচার মধ্যম ও ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীরা? রাজনৈতিক দলগুলোর কেউ সরাসরি ধর্মের জিগির তুলছে, কেউবা ধর্মস্থান ও ধর্মগুরুদের আপ্লুত শ্রদ্ধা নিবেদন করে জনমানসে ধর্মের সুড়সুড়ি দিচ্ছে, আবার কেউবা একই সঙ্গে ধর্ম বিশ্বাস, ঈশ্বর বিশ্বাস, নিয়তি বিশ্বাসকে শোষণের অহিংস কিন্তু প্রবল কার্যকর হাতিয়ার মনে করার পাশাপাশি মানুষের এইসব অন্ধ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ‘রা' কাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে 'বিচ্ছিন্নতা' নামক জুজুর ভয় দেখিয়ে। নির্বাচন নির্ভর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের এই ধরনের আচরণের মধ্য দিয়ে এ কথাই প্রমাণ করে— তারা শেষ পর্যন্ত ধনকুবের শোষকদেরই সহযোগী।

 গত কয়েক বছর ধরে ভারতের তথা পৃথিবীর সমাজ সাংস্কৃতিক পরিবেশে একটি বিশাল ঘটনা নিঃশব্দে ঘটে চলেছে—আধুনিক যুক্তিবাদের অগ্রগমন। কোনও সন্দেহ নেই, আধুনিক যুক্তিবাদের আগ্রাসন ঠেকাতে যে বহুতর পরিকল্পনা দ্রুত গড়ে উঠছে, এ'জাতীয় কর্মকাণ্ড সেই বৃহৎ পরিকল্পনারই অংশ।

১৪৬