পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হবে? সে পথনির্দেশও দিয়েছেন মনীন্দ্রমোহন, “আধ্যাত্মিক পথেই মানুষের মুক্তি, ঈশ্বর বিশ্বাসই মানুষের মনের শান্তি।”

 মণীন্দ্রমোহন চক্রবর্তী অধ্যাপক মানুষ। তাঁর পক্ষে শোভা পায় না, রাজনৈতিক নেতাদের মত, কিচ্ছুটি না জেনেও সে বিষয়ে জনগণকে প্রচুর জ্ঞান দেওয়ার প্রবণতা। অতএব, আশা করছি তিনি ভালমত জেনে বুঝেই বলছেন-অধ্যাত্মবাদ নিয়ে চর্চা করলে মানুষের মুক্তি আসবে। তিনি নিশ্চয়ই 'অধ্যাত্মবাদ' কথাটির অর্থ বিষয়েও ওয়াকিবহাল। অর্থাৎ তিনি জানেন, 'অধ্যাত্মবাদ' মানে 'আত্মা সংক্রান্ত মতবাদ', যার হাত ধরাধরি করে উঠে আসে পরমাত্মা-ঈশ্বর-আল্লা ইত্যাদিরা। উঠে আসে পরলোক, ভূত, জীন, পরলোকের বিচার ইত্যাদি আরও কত কী! অবিনশ্বর আত্মার সুতো ধরে টান মারলেই এ'সবই এক এক করে সারি-সারি উঠে আসে। আত্মার অমরত্বকে প্রথমেই স্বীকার করে নিয়েছে 'অধ্যাত্মবাদ'। আত্মার অমরত্ব নিয়ে কোনও প্রশ্নেরই অবকাশ নেই অধ্যাত্মবাদে। কারণ, আত্মা অমরত্ব হারালে অধ্যাত্মবাদের গোটা তত্ত্বটাই মুহুর্তে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে।

 ‘আত্মা' কাকে বলে? অর্থাৎ, 'আত্মা'র সংজ্ঞা কী? আত্মার সংজ্ঞা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। বহু মতের নির্যাস থেকে বেরিয়ে আসে প্রধান দু'টি মত।

 একঃ 'চিন্তা', 'চেতনা', 'চৈতন্য’ বা ‘মন'ই আত্মা। দুইঃ ‘চিন্তা', 'চেতনা', ‘চৈতন্য' বা 'মন' আত্মারই কাজ-কর্মের ফল।

 বিজ্ঞান পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে—মন, চিন্তা, চেতনা বা চৈতন্য বলে আমরা যাকে চিহ্নিত করি, তা হল মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষেরই ক্রিয়া-বিক্রিয়া বা কাজ-কর্মের ফল।

 মানুষের মৃত্যুর পর এক সময় মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের বাস্তব অস্তিত্বই বিলীন হতে বাধ্য। কারণ, মৃত্যুর পর সাধারণভাবে দেহও বিলীন হয় পুড়ে ছাই হয়ে কবরের মাটিতে মিশে গিয়ে, অথবা বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে পচে-গলে-জন্তুর পেটে গিয়ে। দেহ বিলীনের সঙ্গে সঙ্গে দেহাংশ মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষও বিলীন হয়। এরপর মস্তিস্ক স্নায়ুকোষ নেই, কিন্তু তার কাজ-কর্ম আছে এবং কাজ-কর্মের ফল হিসেবে মনও আছে—এমনটা শুধু কল্পনাতেই সম্ভব।

 অধ্যাত্মবাদীদের আত্মার সংজ্ঞা নিয়ে যে দ্বিতীয় মতটি রয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, চিন্তা, চেতনা, চৈতনা বা মন হল আত্মারই কাজ-কর্মের ফল। এই সংজ্ঞাটিকে মেনে নিলে বলতে হয়—আত্মা হল মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষ।

 মানুষ মরণশীল। গোটা মানুষটাই যখন মরণশীল, তখন তার দেহাংশও যুক্তিগতভাবে মরণশীল হতে বাধ্য। অতএব, আমরা এরপর এই দৃঢ় সিদ্ধান্তে পোঁছাতে পারি—মানুষের দেহাংশ মস্তিষ্কস্নায়ুকোষও মরণশীল। মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষ মরণশীল হলে 'আত্মা'ও মরণশীল হতে বাধ্য।

১৪৮