পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ‘আত্মা’ না বাঁচলে ‘অধ্যাত্মবাদ'ও যে বাঁচে না। যে অধ্যাত্মবাদ দাঁড়িয়ে আছে ‘আত্মা অমর' এই অন্ধ ও ভ্রান্ত বিশ্বাসের ভিতের উপর। সেই মিথ্যের এক ‘বাদ' বা 'ism'-এর পথ ধরে কখনই মানুষের মুক্তি আসতে পারে না। আসতে পারে শুধু সর্বনাশ (আত্মা ও অধ্যাত্মবাদ বিষয়ে বিস্তৃত জানতে উৎসাহী পাঠক-পাঠিকারা পড়তে পারেন, 'অলৌকিক নয়, লৌকিক'-এর ৪র্থ-খণ্ড)।

 মণীন্দ্রবাবু, বাস্তবিকই আপনি কি মনে করেন, যে মায়ের চোখের সামনে ছেলের দু'চোখ উপড়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক দলের পোষা খুনেরা, সেই মায়ের মনের শান্তি ফেরাতে হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির চেয়ে ঈশ্বরে আত্মসমর্পণ অনেক বেশি ফলপ্রসূ দাওয়াই?

 মণীন্দ্রবাবু, আপনি কি সত্যিই মনে করেন, যে সন্তানের চোখের সামনে মাকে সম্পূর্ণ নগ্ন করে প্রকাশ্য রাজপথে পেটাই করেছে মহল্লার রাজনৈতিক মস্তানরা, সেই সন্তানের দাউ দাউ অশান্ত মনকে শান্ত করতে পারে ঈশ্বরের কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ? মস্তানদের কঠোর শাস্তি ও রাজনৈতিক সততার জন্য দাবি তোলা, দাবি আদায়ে শেষতক যাওয়ার চেষ্টায় কি শান্তি নেই? অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থার মধ্যে কি অশান্ত মনে শান্তি আসে না?

 যে ডাক্তারের অবহেলায় শিশু পাপড়ির মৃত্যু হয়েছিল, সেই ডাক্তারদের অকর্মণ্যতা, অবহেলা ও হৃদয়হীনতার বিরুদ্ধে পাপড়ির বাবা-মা দরবার করেছেন মেডিকেল কাউন্সিলের কাছে। আইনের লড়াই চালিয়ে শেষ পর্যন্ত ডাক্তারটির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে পেরেছেন। পেরেছেন তাঁকে জেলে ঢোকাতে। পাপড়ির বাবা-মা ডাক্তারটির অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে জয়ী হয়ে যতটুকু শান্তি পেয়েছিলেন, লড়াই না চালিয়ে ঈশ্বরে আত্মসমর্পণ করে ততটুকু কি পেতেন? তাঁদের এই লড়াই এক দিকে যেমন ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারী অবহেলাকে কিছুটা হলেও সংযত করেছে, তেমনই অবহেলিত রোগীদের অধিকার সম্বন্ধে সচেতনাবোধ জাগিয়ে তুলেছে। ফলে ভবিষ্যতে চিকিৎসকের অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু ও তার দরুন অশান্তির কিছু কারণ নিশ্চয়ই দূর করা গেছে। চিকিৎসকদের দুর্নীতিকে তাড়াতে এবং সেই দুর্নীতির কারণে চেপে বসা অশান্তিকে বাড়াতে সামাজিকভাবেই লড়াই চালাতে হবে, ঈশ্বরের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে অশান্তির সঙ্গে সহাবস্থানকেও মেনে নিতে হবে।

 মণীন্দ্রবাবু, সত্যিই কি আপনি মনে করেন, যে বাবা-মার চোখের সামনে কিশোরী কন্যা দলবদ্ধ পুরুষদের কামনার শিকার হয়, সে বাবা-মা ধর্ষণকারী দলবদ্ধ পশুদের বুক ফুলিয়ে শিস দিয়ে মহল্লায় টহল দিতে দেখার পরও প্রতিরোধের পথে না গিয়ে, ঠাকুর ঘরে দরজা বন্ধ করে চোখের জলে ভাসে, সে-ই পায় পরম শান্তি, যার কোনও বিকল্প নেই?

 মণীন্দ্রবাবু, বন্ধ কারখানার শ্রমিক দেখেছেন? মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চিমনি থেকে ধোঁয়া না ওঠা কারখানার শ্রমিক দেখেছেন? ওদের

১৪৯