পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অধ্যাপক চক্রবর্তীকে একটা ঘটনা শোনাবার লোভ সামলাতে পারলাম না। ভারতের বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ডঃ শান্তিময় চট্টোপাধ্যায়ের জবানীতেই বলি:

 “যদি প্রশ্ন করো, ভগবান মানেন কি না, এককথায় তার উত্তর-না। যদি জিজ্ঞেস করো, কেন না—তাহলে একটা ঘটনার কথা বলি শোনো। আমার বয়স তখন বার-তের। মোহনবাগানের সঙ্গে একটা ইংরেজ টিমের খেলা। মনপ্রাণ দিয়ে ভগবানকে ডেকে বলেছিলাম, মোহানবাগান যেন অন্তত একটা গোল করতে পারে। কিন্তু সেদিন আমাকে চোখের জলে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল মোহনবাগান একটা গোলও করতে পারেনি, বরং তিনটে গোল খেয়েছিল। সেইদিনই বুঝেছিলাম, ভগবান-টগবান সব বাজে, গোল দিতে হলে নিজেদেরই দিতে হবে। বলতে পার, সেটা আমার জীবনের একটা turning point."


 দুই: জগৎজীবন ঘোষ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবরসায়ন বিভাগের শতবার্ষিকী অধ্যাপক। জীবরসায়নের ক্ষেত্রে যে সব বিজ্ঞানী ভারতে কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে নামী বললে বোধহয় ভুল হবে না।

 জগৎবাবু ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। তাঁর কাছে ঈশ্বরের সংজ্ঞা কী? ঈশ্বর কি প্রকৃতি চালনাকারী একটা শক্তি? নিরাকার শক্তি? না কি, তাঁর আকার আছে?

 এবিষয়ে জগৎবাবুর উত্তর ভারি কৌতূহল-উদ্দীপক।

 “সাকার ঈশ্বরে আমি বিশ্বাস করি না, ঈশ্বরকে আমি একটা ইন্দ্রিয়াতীত সত্তা হিসেবে মনি” [বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ঈশ্বর, প্রথম প্রকাশ ১৯৯২, পৃষ্ঠা ৩৭

 ওই বইয়েরই ৪০ পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে:

 "জগৎবাবু কালীভক্ত। তাঁর মনে হয়, কালীর কালো রঙে মহাকাল এসে সংহত হয়েছে। কালীমূর্তি সামনে রেখে মনটাকে নিবদ্ধ করে তিনি শান্তি পান। প্রতি শনিবার বউবাজার ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি গিয়ে ধ্যানে বসেন।”

 জগৎবাবু যখন কালী ওরফে আদ্যাশক্তির ধ্যান করেন, তখন তাঁর অনুভূতি প্রসঙ্গে জানাচ্ছেনঃ

 "আমি তখন সেই আদিশক্তিকে স্মরণ করি; আমার তখন মনে হয়, একটা সুপার পাওয়ার আমাকে চালনা করছে।”

 কোনওরকম ভাব-আবেশ হয় কি?

 "না। আমি তো সাধুসন্তদের মতো মাটি ছাড়িয়ে উপরে উঠতে পারিনি। এই মাটিতে বসেই আমি তখন মনে একটা শক্তি অনুভব করি।”

 জগৎবাবুর এই উত্তরগুলো থেকে আমরা জানতে পারলাম -

 এক: তিনি সাকার ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। দুই: ঈশ্বর তাঁর কাছে

১৫২