পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিরাকার এক ইন্দ্রিয়াতীত সত্তা। তিন: তিনি কালীভক্ত। কালীতে বিশ্বাস করেন। অর্থাৎ সাকার ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। চার: ধ্যানে সাধুসন্তরা মাটি ছাড়িয়ে উপরে উঠতে পারেন।

 জগৎবাবুর কর্মকাণ্ডের ভিতরই যেহেতু মস্তিষ্কের রসায়ন পড়ে, তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল, তাঁর মস্তিস্ক স্নায়ুকোষে আজন্ম-লালিত বিশ্বাস স্থান পেলে পেতে পারে, কিন্তু স্ববিরোধী বিশ্বাস কখনই স্থান পাবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এমন অদ্ভুত ঘটনাই ঘটল! মস্তিস্ক স্নায়ুকোষের গোলমালেই কি এমনটা ঘটল? আর, সাধুদের ধ্যানে শূন্যে ভেসে থাকার ব্যাপারটা? অমনটা কি অনেকবারই ঘটতে দেখেছেন? না কি, না দেখে স্রেফ শোনা কথায় বিশ্বাস করে বসে আছেন?

 (জগৎবাবুই সঠিক উত্তর দিতে পারবেন। জগৎবাবুর কাছে একটি বিনীত অনুরোধ, ধ্যানে শূন্যে ভাসে এমন সাধুর সাক্ষাৎ পেলে আমাদের যুক্তিবাদী সমিতির যে কোনও শাখায় যোগাযোগ করবেন। গ্যারাণ্টি দিচ্ছি, সেই তথাকথিত সাধুর বুজরুকি ফাঁস করে তাকে আবার মাটিতে নামিয়ে আনব।)

 নাকি না দেখে অন্ধ বিশ্বাসে আত্মসমর্পণ? আপনার জন্য দুঃখিত, জগৎবাবু। একই মস্তিস্কে বিজ্ঞান-চিন্তা ও বিজ্ঞানবিরোধী চিন্তার সহাবস্থানে দুঃখিত, এবং সেই সঙ্গে শঙ্কিত। আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে যতটা শঙ্কিত, তারচেয়েও বেশি শঙ্কিত, আপনি পেশায় বিজ্ঞানী হওয়ায় আপনার চিন্তা সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপূল বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে ভেবে।


 তিন: অসীমা চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশুদ্ধ রসায়ন বিভাগের খয়রা প্রফেসর ছিলেন কুড়ি বছর। ১৯৮২ তে নিয়মতান্ত্রিক অবসর গ্রহণ। তবু নিয়মিত ক্লাশ নেন। ১৯৭৩-এ কলকাতা সাইন্স কলেজেই গড়ে তোলেন ‘সেণ্টার অফ অ্যাডভান্সড স্ট্রাডিজ ইন দি কেমিস্ট্রি অফ নাচারাল প্রোডাক্টস'। প্রতিষ্ঠানটির কাজ—গাছগাছড়ার ভেষজমূল নিয়ে উন্নত পর্যায়ে গবেষণা চালানো। ১৯৭৫-এ ইণ্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসের প্রেসিডেণ্ট হন। ওই বছরই পান ‘পদ্মভূষণ'। রাষ্ট্রপতি মনোনীত রাজ্যসভার সদস্য হন ১৯৮২ সালে।

 শ্রীমতী চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ঈশ্বর আসলে কী? তাঁরই কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, “এই যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়মে চলছে, গ্রহ-উপগ্রহ-তারকারা ঠিকমতো ঘুরছে—দিন হচ্ছে, রাত্রি হচ্ছে; ভোর হতেই পাখিরা ডেকে উঠছে, আবার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে যাচ্ছে। মানুষ জন্মাচ্ছে এবং যে জন্মাচ্ছে সে মারা যাচ্ছে—গোটা জগৎ যে একটা নিয়মবন্ধনে চলছে, এর নিশ্চয় একজন কর্তা আছেন। কর্তা ছাড়া তো কর্ম হয় না। বিশ্বনিয়ন্ত্রণের এই যে মহাকর্তা, তিনিই ঈশ্বর।”

 শুধু অসীমা চট্টোপাধ্যায় নন, অনেক বিজ্ঞান-পেশার ব্যক্তিই বলেন—এই

১৫৩