পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কোনও গবেষণা চালাবারই প্রয়োজন থাকবে না। মা ভৈ! পৃথিবীতে অধ্যাত্মবাদ নিয়ে বিজ্ঞান গবেষণার ভবিষ্যৎ চিত্রের কথা চিন্তা করে এখনি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।


 চার: দিলীপকুমার সিংহ গণিতজ্ঞ। ফলিত গণিত তাঁর অধ্যাপনা ও গবেষণার বিষয়। ফিজিক্যাল, বায়োলজিক্যাল, সোশ্যাল, এনভায়রনমেণ্টাল ইত্যাদি বহু বিজ্ঞান শাখার গাণিতিক মডেল তিনি তৈরি করেছেন। দেশ-বিদেশের বহু সোসাইটি ও আকাদেমির তিনি ফেলো। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

 সিংহমশাই ঈশ্বর প্রসঙ্গে সিংহবিক্রমে প্রশ্ন তুলেছেন, “কোন্ ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে কোন বিজ্ঞানী বলতে পারেন, তিনি ভগবান মানেন না? বিজ্ঞান তো কোনোকিছু অবিশ্বাস করতে বলে না।”

 ভালো, ভালো, খুব ভালো। আশা করি সিংহমশাই কথায় ও কাজে এক।এবং তিনি কুমড়োপটাশ, হাঁসজারু, বকচ্ছপ, টিয়ামুখো গিরগিটি, রামগরুড়ের ছানা, শাকচুন্নি থেকে পক্ষীরাজ ঘোড়া পর্যন্ত সব কিছুই মানেন। কারণ, সত্যিই তো কোন ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে তিনি বলবেন, “আমি ওসব মানি না। বিজ্ঞান তো কোনও কিছুকেই অবিশ্বাস করতে বলে না।

 গণিতবিজ্ঞানী দিলীপবাবুর কথায়, “যাঁরা অনুসন্ধান না করেই বলেন, ভগবান মানেন না, তাঁরা অবৈজ্ঞানিকভাবে বলেন, হাততালি পাবার জন্য গায়ের জোরে বলেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা তো রাজনৈতিক নেতা নন, তাঁদের হাততালি পাবার দরকার কী? বিজ্ঞানীদের হাততালি পাবার কোনো দরকারই নেই।”

 দিলীপবাবু বিজ্ঞানীদের ঈশ্বর নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে বলেছেন। অনুসন্ধান না চালিয়ে ‘ঈশ্বর নেই' বলার ব্যাপারটাকে দারুণ রকম নিন্দা-মন্দ করেছেন। দিলীপবাবুর এ'জাতীয় মতামতকে গুরুত্ব দিলে কুমড়োপটাশ থেকে পক্ষীরাজ ঘোড়া পর্যন্ত সব্বার ক্ষেত্রেই গভীর অনুসন্ধান চালাবার আগে 'নেই' বলার অধিকার বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে হয়।

 দিলীপবাবুর বক্তব্যের পিঠে দারুণ চপেটাঘাতের মতই এসে পড়েছে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী তারকমোহন দাসের চাঁচাছোলা কথাবার্তা। তারমোহনবাবুর পরিচয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যাণ্ট ফিজিওলজি বিভাগের প্রফেসর, অ্যাগ্রিকালচার অ্যাণ্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স ফ্যাকাল্টির ডীন, এনভায়রনমেণ্টাল সায়েন্স বিভাগের কো-অর্ডিনেটর। ভারত সরকারের গঙ্গাদূষণ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন, চালাচ্ছেন বায়ুদূষণে উদ্ভিদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা।

 তারমোহনবাবু ঈশ্বর মানেন না। কেন মানেন না? তাঁর কথায়, থাকলে এতদিনে বেরিয়ে যেতেন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তাঁকে আবিষ্কার করা যেত। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা যায়নি। যাবেও না কোনোদিন। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি হল—প্রথমে একটা প্রশ্ন থাকবে, তারপর সেটা নিয়ে

১৫৬