পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এক্সপেরিমেণ্টেশন হবে, তারপর ইনফারেন্স হবে এবং শেষে সেই ইনফারেন্স অনুসারে ব্যাখ্যা হবে। কিন্তু ঈশ্বর সম্বন্ধে এসব কিছু হয়েছে বলে আমার জানা নেই, আমি কোথাও কোনো রেফারেন্স পাইনি। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত না বিজ্ঞানে প্রমাণ পাচ্ছি ঈশ্বর আছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ঈশ্বর আছেন মানতে রাজি নই।”

 দিলীপকুমার সিংহ স্বীকার করেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে কখনই ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় না। তাঁর কথায়, “আসলে এটা অনুভূতির প্রশ্ন—এবং অনুভূতি অনেকটা সংস্কারের উপর নির্ভর করে। আমরা লেখাপড়া শিখেছি বলেই পুরোপুরি সংস্কারমুক্ত, একথা কখনই বলা যায় না। আমাদের সকলেরই কিছু-না-কিছু সংস্কার আছে, সেই সংস্কারই গোড়ায় ঠিক করে দেয় ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের ধারণা কী হবে। সংস্কার তো ছেলেবেলা থেকেই গড়ে ওঠে, তাই আপনি যদি ঈশ্বর আছেন এই সংস্কারের মধ্যে বড়ো হন তাহলে ঈশ্বর আছেন, আপনার মানতে ইচ্ছা হবে।” ঝুলি থেকে বিড়াল বেরুল! তাহলে ঈশ্বর কি শুধুই সংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বাস ও অনুভূতির ব্যাপার মাত্র? নাকি বিজ্ঞানী দিলীপকুমার সিংহের 'ঈশ্বর' অন্ধবিশ্বাসের সীমা অতিক্রম করে 'প্রত্যয়' হয়ে প্রতিষ্ঠিত?

 দিলীপবাবুর কথায়, “আমার স্বীকার করতে সঙ্কোচ নেই, আমার মধ্যে একটা দ্বিধাগ্রস্ত ভাব আছে, আমি প্রচণ্ড একটা দ্বন্দ্বের মধ্যে আছি—ঈশ্বর আছেন একথা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছি না, আবার জোর দিয়ে বলতেও পারছি না—হ্যাঁ, ঈশ্বর আছেন।”

 ('সাতকাণ্ড রামায়ণ, সীতা কার বাবা?' ব্যাপারটা এমনই দাঁড়াল না কি? আশা করছি, দিলীপবাবু ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ ‘অবৈজ্ঞানিকভাবে' করেননি। হাততালি পাবার লোভে এমনটা বলেননি। কিন্তু তাহলে কেন ঈশ্বর-অস্তিত্বে সন্দেহ প্রকাশের জন্য বিজ্ঞানীদের গাল-পারা! ধুৎ-তারি-ছাই! এত উল্টো-পাল্টা কথা-বার্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাবে দেখছি।)

 কিন্তু এসব কথার পরেও সিংহমশাই ঈশ্বর প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তা সত্যিই চমকপ্রদ! তাঁর কথায়, “অবিশ্বাস কী করে করি বলুন তো। আমি নিজে একেবারেই কিছু টের পাইনি, তা তো নয়।”

 কীভাবে টের পেয়েছেন, বলতে গিয়ে জানাচ্ছেন, “আমার বোনেদের ভালো বিয়ে হয়েছে, ভাইয়েরা জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আমিও নেহাত খারাপ নেই। নিশ্চয়ই কেউ অদৃশ্য হাতে আমাকে সাহায্য করেছে। সে ঈশ্বরও হতে পারে, একটা শক্তিও হতে পারে।...তাকে ঈশ্বর বলুন না, দোষ কী।”

 দিলীপকুমার সিংহের বোনেদের ভালো বিয়ে ও ভাইদের প্রতিষ্ঠা যদি ঈশ্বর আস্তির একটা প্রমাণ হয়, তবে বহু মানুষের বোনেদের খারাপ বিয়ে ও তাদের ভাইদের অপ্রতিষ্ঠা কি ঈশ্বরের অনস্তিত্বের প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায় না? দিলীপবাবু কী বলেন?

১৫৭