পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 পাঁচ: সুশীলকুমার মুখোপাধ্যায় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য, বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রাক্তন অধিকর্তা, ‘ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি কালটিভেশন অফ সাইন্স’-এর সভাপতি। ভারতসরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত কমিটির প্রাক্তন সদস্য। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা পর্ষদের সদস্য। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা সারা ভারত বিজ্ঞান জাঠার (১৯৮৭) অন্যতম নেতা (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য—বিজ্ঞান আন্দোলন গড়ে তুলতে যে সব বিষয় জাঠা বেছে নিয়েছিল, তার মধ্যে বিষয় হিসেবে স্থান পায়নি 'কুসংস্কার', স্থান পায়নি যুক্তিমনস্ক মানুষ গড়ার প্রয়াস)। মৃত্তিকাবিজ্ঞান ও কৃষিরসায়ন নিয়ে কাজের জন্য ভারতে যাঁরা অগ্রগণ্য, সুশীলকুমার মুখোপাধ্যায় তাঁদের একজন।

 সুশীলবাবু কি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন? এবিষয়ে তাঁর সাফ জবাব, “দেখুন, ঈশ্বর নিয়ে আমি কখনও চর্চা করিনি। বিজ্ঞানী কেন, যে কোনো যুক্তিবাদী লোকই বলবে, 'যা নিয়ে তুমি কখনও চর্চা করোনি, তা নিয়ে তোমার পক্ষে কিছু বলা ঠিক নয়। কেননা, সে সম্বন্ধে তোমার ধারণা ভ্রান্ত হতে পারে। অনুভূতির সাহায্যে হয়তো কিছু বলতে পার, কিন্তু অনুভূতিও অনেক সময় তোমাকে ভিন্ন পথে নিয়ে যেতে পারে। কাজেই আমি মনে করি, আমার পক্ষে এ বিষয়ে কিছু না বলাই শ্রেয়।”

 ভাল কথা! সুশীলবাবু যেহেতু ঈশ্বর নিয়ে চর্চা করেননি, তাই ঈশ্বর আছে, কি নেই, এ বিষয়ে কোনও রকম মত প্রকাশে নারাজ। তিনি আর এক প্রশ্নের উত্তরে স্পষ্টতই জানিয়েছেন, “ঈশ্বর আছেন কি না আমি জানি না। এই বিষয়ে তাঁর চর্চা নেই তো, তাই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। আশা করি, রামগরুড় ইত্যাদির অস্তিত্ব প্রসঙ্গে প্রশ্নের মুখোমুখি হলেও সুশীলবাবু বলতেন—রামগরুড় ইত্যাদির অস্তিত্ব আছে কি না, আমি জানি না। থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে।

 তবে সুশীলবাবু একথা সোচ্চারে ঘোষণা করেছেন, “ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা একটা বিজ্ঞান।”

 এই জাতীয় কথা আর কোনও বিজ্ঞানীর লেখায় বা কথায় আজ পর্যন্ত উচ্চারিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সুশীলবাবুর কথায়, “পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের সঙ্গে এই বিজ্ঞানের মিল নেই।”

 “পাশ্চাত্য বিজ্ঞান মানেই বাইরের জিনিস অর্থাৎ আমরা যে জিনিস দেখতে পাচ্ছি, স্পর্শ করতে পারছি সেই জিনিস। সবই ফিজিক্যাল ব্যাপার। এ দিয়ে ঈশ্বরের পরিমাপ হয় না, এ দিয়ে ঈশ্বর আছে কি নেই বলা যায় না।”

 “ভারতীয় অধ্যাত্মবাদ ভিতরের জিনিস নিয়ে নিজের ভিতরটা দেখা ও বোঝার চেষ্টা করাই এই বিজ্ঞানের লক্ষ্য।”

 ডক্টর সুশীলকুমার মুখোপাধ্যায় নিশ্চয়ই অধ্যাত্মবাদ নিয়ে চর্চা করেই এ'সব কথা বলেছেন। চর্চা করে দেখেছেন, আত্মা অমর। ভূত-প্রেত-পরমাত্মা-ঈশ্বর-

১৫৮