পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আল্লা-পরলোক, ইত্যাদি সবেরই বাস্তব অস্তিত্ব আছে! ডক্টর মুখোপাধ্যায়ের মৃত্তিকা গবেষণাপত্র শ'র উপর প্রকাশিত হয়েছে। নামী বিদেশি বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থেও কিছু গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু যা প্রকাশিত হয়েছে, সবই তো পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের জিনিস। প্রাচ্য বিজ্ঞান অর্থাৎ ভারতীয় অধ্যাত্মবাদ নিয়ে তাঁর চর্চা ও গবেষণাপত্র অপ্রকাশিত রেখে তিনি কি প্রাচ্য-বিজ্ঞান, ভারতীয় অধ্যাত্মবাদ ও তামাম বিশ্ববাসীকে বিশালভাবে বঞ্চিত করছেন না? আমজনতার পক্ষ থেকে, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট মৃত্তিকাবিজ্ঞানী ও অধ্যাত্মবিজ্ঞানী ডক্টর সুশীলকুমার মুখোপাধ্যায়ের প্রতি বিনীত নিবেদন, তিনি অধ্যাত্মবিজ্ঞান বিষয়ক তাঁর চর্চা ও গবেষণার সঙ্গে জনগণের পরিচয় ঘটাবার সুযোগ করে দিন। তাঁর প্রাচ্য বিজ্ঞানচর্চার অসাধারণ দিকটি জনগণের কাছে, জনণের স্বার্থে উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক।

 যে সুশীলবাবু সোচ্চারে ঘোষণা করেছেন, “ঈশ্বর আছেন কি না আমি জানি না, সেই সুশীলবাবুই উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা রেখেছেন, “ভারতীয় অধ্যাত্মিকতাও একটা বিজ্ঞান", অর্থাৎ “ভারতীয় আত্মা পরমাত্মা ও পরলোক তত্ত্ব বিজ্ঞান"। যাঁরা সুশীলবাবুর এমন চূড়ান্ত স্ববিরোধিতায় হতবুদ্ধি ও হতবাক, তাঁদের অবগতির জন্য সুশীলবাবুর আরও কিছু কৌতুহল উদ্দীপক বা 'মজার ছত্রিশ ভাজা' মার্কা উক্তি তুলে দিচ্ছি:

 (এক) “রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ঈশ্বর লাভ করেছিলেন এবং নরেনের মতো ঐরকম ঘোর নাস্তিককেও ঈশ্বর দেখিয়েছিলেন, সুতরাং নিশ্চয় তাঁর মধ্যে একটা প্রতীতি (প্রত্যয়) জন্মেছিল| এই প্রতীতিই আসল কথা। বিজ্ঞানীদেরও এইরকম প্রতীতি জন্মায, তবেই তাঁরা একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারেন।”

 (দুই) “দেখুন, বিজ্ঞানে সকলের ভাষা সকলে বোঝেন না। স্পেশালাইজেশনের দরুন বিজ্ঞানের ভাষায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। এক বিজ্ঞানের লোক আর-এক বিজ্ঞানের ভাষা খুব বেশি বুঝতে পারেন না। যেমন ধরুন, আমি সয়েল কেমিস্ট্রির লোক, অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের ভাষা আমি ঠিক বুঝি না—অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে এমনসব টার্মিনোলজি ব্যবহার করা হয় যা আমার বোধগম্য হয় না। কিন্তু আকারে-ইঙ্গিতে ভাবে-ভঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলে কিছু বুঝি। আধ্যাত্মিক জগতেও এইরকম আছে।”

 (তিন) “রামকৃষ্ণদেবের কথা দিয়েই বলি। দক্ষিণেশ্বরে রামকৃষ্ণদেবের কাছে দূরদূরান্ত থেকে অনেক সাধুসন্ত আসতেন। গঙ্গাতীরে এক পরম সাধক আছেন শুনেই তাঁরা আসতেন। তাঁরা তাঁর ভাষা জানতেন না। রামকৃষ্ণদেবের সঙ্গে তাঁদের হয়তো দু-চারটে কথা হত-এছাড়া বেশিরভাগই আকার-ইঙ্গিত, চোখের ভঙ্গি, হাতের মুদ্রা। এইভাবেই তাঁদের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদান হত, এক ডিসিপ্লিনের বিজ্ঞানীর আর-এক ডিসিপ্লিনের বিজ্ঞানীর মধ্যে যেমন হয়। কাজেই এ-ও একটা বিজ্ঞান।”

১৫৯