পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 (তখন খড়গপুরের ট্রাফিক সেটেলমেণ্টে থাকি। সীতানাথ মাথায় কয়লার ঝুড়ি নিয়ে কয়লা বেচতে আসত। বিয়ে করল দক্ষিণ ভারতীয় একটি মেয়েকে। মেয়েটিও কয়লা বেচতে আসত। কিন্তু তেলুগু ছাড়া আর সব ভাষাই তার কাছে ছিল পরম-রহস্যময়। আকার-ইঙ্গিত-চোখের ভঙ্গি-হাতের মুদ্রায় ভাববিনিময় করত। সীতানাথ ছিল ওড়িয়াভাষী।

 সীতানাথ ও তার পরিবারের সকলের সঙ্গেই সীতানাথের জীবনসঙ্গিনীর ভাববিনিময়ের ভাষা ছিল আকার-ইঙ্গিত। এখন মনে হচ্ছে, আসল মানেটা বুঝতে পারছি। ওদের যেভাবে আকার-ইঙ্গিতে ভাব বিনিময় হত, সেভাবেই এক ডিসিপ্লিনের বিজ্ঞানীর সঙ্গে আর-এক ডিসিপ্লিনের বিজ্ঞানীর ভাব বিনিময় হয়। কাজেই সীতানাথ ও তার জীবনসঙ্গিনীর ব্যাপার-স্যাপারও আসলে বিজ্ঞান। ওরা ছিল খুব বড় মাপের বিজ্ঞানী।

 (চার) “জগৎ চলছে প্রকৃতির নিয়মে। জগৎ চালাবার জন্য আর-একজনের দরকার আছে বলে মনে করার প্রয়োজন নেই। আবার যদি জিজ্ঞাসা করেন, জগৎ সৃষ্টি হল কী করে, উত্তরে বলব, সে-ও প্রকৃতির নিয়মে। কেউ একজন জগৎ সৃষ্টি করেছে ভাবলে সমস্যা বাড়ে। তখন প্রশ্ন ওঠে, তাঁকে সৃষ্টি করেছেন কে? এ প্রশ্নের উত্তর পাব না। তখন যেতে যেতে সেই ইনফিনিটিতে গিয়ে পোঁছতে হবে। অত গোলমালের মধ্যে না যাওয়াই ভালো। প্রকৃতির নিয়মে জগৎ সৃষ্টি হয়েছে ও প্রকৃতির নিয়মে জগৎ চলছে মেনে নিলে কোনো গোল থাকে না।”

 (পাঁচ) “আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না, সেইটেই আমার ধর্ম।” সুশীলবাবুর এই পাঁচমিশেলি বক্তব্য বিষয়ে মন্তব্য নিঃষ্প্রয়োজন।


 ছয়: গোরাচাঁদ চট্টোপাধ্যায় গত তিরিশ বছর ধরে ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পের কর্ণধার হিসেবে যুক্ত ছিলেন। জীবরসায়নের নানা শাখায় তাঁর প্রায় পৌনে দু'শোর মত গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে দেশ বিদেশে। এক সময় তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভিজিটিং ফেলো ছিলেন।

 গোরাচাঁদবাবুর কথায়, “আমাদের সৌরমণ্ডলের কথা ধরুন, সূর্যের চারপাশে গ্রহরা তাদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে অবিরাম ঘুরছে। এই যে তাদের মুভমেণ্ট, এর একটা আশ্চর্য সিংক্রোনাইজেশন আছে। ধরুন, আজ থেকে দশ বছর পরে একটা চন্দ্রগ্রহণ কি সূর্যগ্রহণ হবে। আমাদের ম্যাথম্যাটিক্যাল সায়েন্স এত উন্নতি করে গেছে যে, আমরা অঙ্ক কষে বলে দিতে পারি, অমুক দিন অমুক সময় এই গ্রহণ হবে। এ একটা ফ্যাণ্টাস্টিক ব্যাপার। আমার মনে হয়, আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের এই যে গতিশীলত, কোনো এক অতিপ্রাকৃত শক্তি একে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই যে একটা সুপারন্যাচারাল ফোর্স বা গাইডিং ফোর্স—এটা কিন্তু সামথিং মিরাকিউলাস।”

১৬০