পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়। আমি যখন বিশ্ব-রহস্যের কথা ভাবি তখন বিস্ময়ে অবাক হয়ে যাই। এই যে বিশাল সৃষ্টি, এর স্রষ্টা নিশ্চয় আছেন একজন। তিনি কে? তাঁকে তো ধরতে পারি না, ছুঁতে পারি না, দেখতে পারি না! তাহলে তিনি কে?”

 মৃণালবাবু প্রশ্নের মধ্য দিয়ে ঘুরিয়ে ঈশ্বরকেই প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। মৃণালবাবুর ধারণার এই ঈশ্বর বিশ্বের স্রষ্টা এবং এই ঈশ্বরকে ধরা, ছোঁয়া, দেখা যায় না। সৃষ্টি থাকলেই স্রষ্টার থাকাটা আবশ্যিক শর্ত হলে, সেই স্রষ্টার-ও একজন স্রষ্টা থাকাটা জরুরী হয়ে পড়ে। তারপর সেই স্রষ্টার স্রষ্টা কে? তার স্রষ্টা কে? এইভাবে প্রশ্নে প্রশ্নে মৃণালবাবুকে জেরবার করাই যায়। কিন্তু এখানে আমরা মৃণালবাবুর দেওয়া ঈশ্বর সংজ্ঞার সেই দিকে পাঠক-পাঠিকাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেখানে তিনি বলেছেন, এই বিশ্ব স্রষ্টা ঈশ্বরকে ধরা ছোঁয়া দেখা যায় না। কেন দেখা যায় না? তার উত্তরে মৃণালবাবু বলেছেন, “তিনি (ঈশ্বর) দেহধারী কেউ নন। তাঁকে দেহধারী বলে ভাবলে ভুল হবে।”

 মৃণালবাবুর দেওয়া ঈশ্বরের এই সংজ্ঞাকে মেনে নিলে বলতেই হয়-প্রত্যেকটি ধর্মের প্রতিটি ঈশ্বর দর্শনের দাবিদারদের দাবিই অসার, অলীক বা মিথ্যে। অর্থাৎ মোদ্দা কথায়—এইসব ঈশ্বরের দর্শন পাওয়া ধর্মগুরুরা হয় মানসিক রোগী, নতুবা প্রতারক।


সাত: ঈশ্বর ইন্দ্রিয়ের আগোচর?

 ইণ্ডিয়ান সায়েন্স কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রেসিডেণ্ট, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অরুণ কুমার শর্মার ধারণায়—ঈশ্বর শুধু ধরা ছোঁওয়া দেখার বাইরে নন, ঈশ্বর ইন্দ্রিয়ের অগোচর॥

 বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ঈশ্বর সম্বন্ধে এমন ধারণায় পৌঁছতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন, না নেহাতই মনে হয়েছে তাই বলেছেন—সে কথা আমাদের জানা নেই। শুধু জেনেছি, অরুণবাবুর দৃঢ় ধারণা—আমাদের যে পাঁচটি ইন্দ্রিয় আছে, (হ্যাঁ শুধু পাঁচটি, ছ'টি নয়। ছ'নম্বর ইন্দ্রিয়ের অবস্থান শুধুই কল্পনায়) তার কোনওটির দ্বারাই ঈশ্বরকে অনুভব করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ ঈশ্বরকে কোনওভাবেই অনুভব করা যায় না।

 অরুণবাবুর দেওয়া ঈশ্বরের এই সংজ্ঞা (যা কিছুকিছু ঈশ্বর-বিশ্বাসী বিজ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবীদেরও দেওয়া সংজ্ঞা) মেনে নিলে মানতেই হয় রামকৃষ্ণের ঈশ্বরের সঙ্গে গপ্পো-সপ্লো করা থেকে মোজেসের ঈশ্বরের বাণী শোনা পর্যন্ত সবই নেহাতই গপ্পো কথা।

 কিন্তু শুধু 'না' দিয়ে তো আর সংজ্ঞা তৈরি হয় না, ঈশ্বর তাহলে অরুণবাবুর ধারণায় কেমন?

 অরুণবাবুর জবাব, “একটা শক্তি নিশ্চয়।”

 কেমন সে শক্তি?

১৭১