বা নিয়মের অনুসরণ। এই নিয়ম বা বিধান লঙ্ঘনের অপর নাম স্বেচ্ছাচারিতা। ঈশ্বর নিয়মতান্ত্রিক হলে তাঁর কৃপালাভের জন্য পূজা, ধ্যান, যোগসাধনা সহ সমস্ত রকম প্রচেষ্টাই অমূলক ও ব্যর্থ হতে বাধ্য। কারণ ঈশ্বর নিয়মতান্ত্রিক হলে তিনি ভক্তের অনুরোধ রাখতে কোনও ভাবেই কৃপা বিলোতে পারেন না। অন্যের অনুরোধ রক্ষার অর্থই হল আপন ইচ্ছের বিরুদ্ধে কাজ কবা। নিজের নিয়ম মত যা করতেন, তা না করা। নিয়মতান্ত্রিক ঈশ্বর ভজনার ফল সব সময়ই শূন্য হতে বাধ্য।
ঈশ্বর একই সঙ্গে 'নিয়মতান্ত্রিক’ ও ‘ভক্তের ভগবান' হতে পারেন না। দুটি একই সঙ্গে হওয়া সোনার পাথরবাটির মতই অসম্ভব।
O
ঈশ্বর একই সঙ্গে 'নিয়মতান্ত্রিক' ও 'ভক্তের ভগবান' হতে পারেন না। দুটি একই সঙ্গে হওয়া সোনার পাথরবাটির মতই অসম্ভব।
O
এত সবের পরও ঈশ্বরকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক শক্তি বলাটা হাস্যকর পর্যায়ে দাঁড়ায় না কি?
‘সৃষ্টি থাকলে স্রষ্টা থাকতেই হবে’—যাঁরা এমন যুক্তির অবতারণা করে ঈশ্বরকে জগৎ স্রষ্টার সংজ্ঞা দিয়েছেন, তাঁদের এই যুক্তির বিরুদ্ধে জোরালো যুক্তি হাজির করে জিজ্ঞেস করা যায়, ঈশ্বরের স্রষ্টা কে?
উত্তর—‘স্বয়ম্ভূ' হলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে স্বয়ম্ভূ ভাবতে অসুবিধে কোথায়—এ’ প্রশ্ন স্বভাবতই উঠে আসবে যুক্তির হাত ধরে। অধ্যাত্মবাদী ও ঈশ্বর-বিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা এই যুক্তির বিরুদ্ধে উত্তর খুঁজতে সচেষ্ট হয়ে উঠুন, নতুবা তাঁদের ঈশ্বর, জিজ্ঞাসার মুখে বার বার মুখ থুবড়ে পড়বেন।
বারো: প্রকৃতির নিয়ম-ই কি ঈশ্বর? না, নিয়মের কর্তা ঈশ্বর?
'পদ্মভূষণ' উপাধিতে ভূষিত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী অসীমা চট্টোপাধ্যায় ঈশ্বরের একটি সংজ্ঞা দিয়েছেন, “এই যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়মে চলছে, গ্রহ-উপগ্রহ-তারকারা ঠিকমতো ঘুরছে—দিন হচ্ছে, রাত্রি হচ্ছে; ভোর হতেই পাখিরা ডেকে উঠছে, আবার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে যাচ্ছে; মানুষ জন্মাচ্ছে এবং যে জন্মাচ্ছে সে মারা যাচ্ছে—গোটা জগৎ যে একটা নিয়মবন্ধনে চলছে, এর নিশ্চয় একজন কর্তা আছেন। কর্তা ছাড়া তো কর্ম হয় না। বিশ্বনিয়ন্ত্রণের এই যে মহাকর্তা, তিনিই ঈশ্বর। তাঁকে আপনি পরমব্রহ্ম বলুন বা মহাশক্তি বলুন বা উপনিষদের মহালক্ষ্মী বলুন, আমি তাঁকে ঈশ্বর বলছি।”
অনেক বুদ্ধিজীবীরা প্রকৃতির নিয়মের একজন কর্তা আছেন ধারণা করে সেই কর্তাকেই ‘ঈশ্বর' সংজ্ঞা দিচ্ছেন।