পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অনেক বুদ্ধিজীবী আবার প্রকৃতির নিয়মকেই ‘ঈশ্বর’ সংজ্ঞা দিচ্ছেন। আমরা কোন সংজ্ঞাটি গ্রহণ করব? প্রকৃতির নিয়ম-ই ঈশ্বর? না, নিয়মের কর্তা ঈশ্বর?

 প্রকৃতির নিয়মকে কেউ যদি 'ঈশ্বর' বলেন, বলতে পারেন। অসুবিধে দেখি না। 'না-ঈশ্বর'ও বলতে পারেন। তাতেও অসুবিধে দেখি না। সেই একটা কথা আছে না, 'গোলাপকে যে নামেই ডাকুক...'। তবে প্রকৃতির নিয়মকে যাঁরা ঈশ্বর বলেন, তাঁরা আবার একই সঙ্গে মন্ত্রে-তন্ত্রে-ধ্যানে বা ঈশ্বর-দর্শনে বিশ্বাসী হলেই বেজায় গণ্ডগোল দেখা দেবে। স্ববিরোধিতার গণ্ডগোল।

O

প্রকৃতির নিয়মকে যাঁরা ঈশ্বর বলেন, তাঁরা আবার একই সঙ্গে মন্ত্র-তত্র-ধ্যানে বা ঈশ্বর-দর্শনে বিশ্বাসী হলেই বেজায় গণ্ডগোল দেখা দেবে। স্ববিরোধিতার গণ্ডগোল।

O

 যাঁরা প্রকৃতির নিয়মের কর্তাকে ঈশ্বর বলে মনে করেন, তাঁদের কাছে একটি বিনীত প্রশ্ন আছে বিশ্বকে চালাবার জন্য যদি একজন কর্তার প্রয়োজন অবশ্যম্ভাবী হয়, তবে সেই কর্তাটিকে চালাবার জন্যেও তো একজন কর্তার থাকাটা একান্ত জরুরী হয়ে পড়ে। এভাবে তাঁর কর্তা, তাঁর কর্তা করতে করতে ব্যাপারটা চলতেই থাকবে।

 আমাদের এমন বেয়াড়া প্রশ্নের উত্তরে ওঁরা যদি বলেন, “ওই কর্তা বা ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ", তাহলে আমরাও একই যুক্তির সাহায্য নিয়ে বলব—এই 'স্বয়ম্ভূ' শব্দটা প্রকৃতির বা প্রকৃতির নিয়মের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে অসুবিধে কোথায়? না, তাত্ত্বিকভাবেই কোনও অসুবিধে নেই।


তেরো: ঈশ্বর দয়ালু না ন্যায়পরায়ণ?

 ঈশ্বরকে 'শক্তি' বা 'প্রকৃতির নিয়ম' ইত্যাদি সংজ্ঞায় আটকালে তাত্ত্বিকভাবেই ঈশ্বরকে ‘দয়ালু' বা 'ন্যায়পরায়ণ' ইত্যাদি গুণে ভূষিত করা যায় না। ঈশ্বর দয়ালু বা ন্যায়পরায়ণ হলে সেই ঈশ্বর কখনই শক্তি জাতীয় কিছু না হয়ে সাকার হতে বাধ্য।

 ঈশ্বর সাকার হলেও তাঁর পক্ষে একই সঙ্গে ‘দয়ালু' ও 'ন্যায়পরায়ণ' হওয়া সম্ভব নয়। ন্যায় বিচারের মধ্য দিয়ে যাকে যে কর্মফল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ন্যায়বিচারক ঈশ্বর, তা শাস্তিপ্রাপ্তের প্রার্থনায় লাঘব করে দিলে ন্যায়কে বজায় রাখা হয় না।

O

ন্যায় বিচারের মধ্য দিয়ে যাকে যে কর্মফল নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন ন্যায়বিচারক ঈশ্বর, তা শাস্তিপ্রাপ্তের প্রার্থনায় লাঘব করে দিলে ন্যায়কে বজায় রাখা হয় না।

O

১৭৭