পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একচেটিয়া ক্ষমতার উপর আঘাত আসছেই। এবং স্বীকার করতেই হচ্ছে, ঈশ্বর একচেটিয়া শক্তির অধিকারী নন।

 এবার আসুন, আমরা দেখি, কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা ব্যাপারটা কী? দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা না হয় রামচন্দ্রকেই বেছে নিই। এও ধরে নিলাম, ঈশ্বরের ইচ্ছে ও জন্মকালীন গ্রহ-নক্ষত্রের সমাবেশ অনুসারে রামচন্দ্রের ভাগ্যে নির্ধারিত ছিল-রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজয়। কিন্তু বশিষ্ঠ মুনির কথায় উদ্দীপ্ত হয়ে রামচন্দ্র প্রচেষ্টার দ্বারা সেই পরাজয়কে জয়ে পরিণত করেছিলেন। এখানে রামচন্দ্রের ভাগ্যে পূর্বনির্ধারিত ছিল পরাজয়, আধা-পরাজয় ও আধা-জয় নয়। অতএব রামচন্দ্রের জয়ের পিছনে যদি পুরুষকার ছিল বলেই ধরে নিতে হয়, তবে এও ধরে নিতে হবে, সেই পুরুষকার নির্ধারিত ভাগ্যকেই পাল্টে দিয়েছিল। আধা-নির্ধারিত ভাগ্যকে নয়।


 ‘পুরুষকার' নিয়ে আলোচনায় আরও দু'একটা কথা বলে নেওয়া সঙ্গত বলে মনে করছি। 'পুরুষকার' কথার অর্থ যে 'উদ্যোগ', কর্মপ্রচেষ্টা সেকথা আমরা আগেই আলোচনা করেছি। এখন আলোচনা করব উদ্যোগের পরিণতিতে সাফলালাভের সম্ভাবনার সঙ্গে সমাজ ব্যবস্থার সম্পর্ক নিয়ে।

 প্রাকৃতিক, আর্থ-সামাজিক, সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশযুক্ত সমাজে মানুষের উদ্যোগ সার্থকতা খুঁজে পায়। কিন্তু অনুন্নত দেশে, দুর্নীতির হাতে বন্দী দেশে, যেখানে জীবনযুদ্ধে পদে পদে অনিশ্চয়তা, ন্যায়নীতির অভাব, সেখানে পুরুষকার বা কর্মপ্রচেষ্টা বহুক্ষেত্রেই ঐকান্তিকতা সত্বেও ব্যর্থ হয় বারবার।

 উদাহরণ হিসেবে আসুন না কেন, আমাদের দেশকেই বেছে নিই। ভাবুন তো, আগামী বছর এ দেশের বারো লক্ষ বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হল। দেশের বেকার সংখ্যা বারো কোটি। অর্থাৎ শতকরা একজনের বেকারত্ব ঘুচবে। শতকরা নিরানব্বইজনই থেকে যাবে বেকার। শতকরা দশজন বেকার যদি কর্মপ্রচেষ্টার দ্বারা, পুরুষকার দ্বারা চাকরি পেতে বিভিন্নভাবে নিজেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার উপযুক্ত করে গড়েও তোলে, তবুও প্রতি দশজনের মধ্যে ন'জনের পুরুষকারই জীবনযুদ্ধে বয়ে নিয়ে আসবে কেবলই ক্লান্তি ও ব্যর্থতা। আমাদের দেশের বাস্তব চিত্রটা আরও করুণ। এদেশে স্কুলে শিক্ষকের চাকরি পেতে নির্বাচিত হবার পরও লাখখানেক টাকা ডোনেশনের নামে ঘুষ দেবার ক্ষমতা থাকা চাই; ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকার ডোনেশনের নামে ঘুষ বা মন্ত্রীর কোটা ভাঙাবার ক্ষমতা থাকলেও চলে; অনেক প্রদেশেই সরকারি চাকরির নিলাম হয়। এদেশে নিলাম হয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে সীমান্তে চোরাচালানের অধিকার। নিলাম হয় কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে কনস্টেবলের ডিউটি।

১৮২