পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কারণ, এই সংজ্ঞাকে মেনে নিলে হিন্দু ধর্ম ছাড়া যে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসীকেও 'নাস্তিক' বলে চিহ্নিত করতে হয়। অথচ বাস্তবে অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মাবলম্বীরা কেউই 'atheist'-এর দেওয়া সংজ্ঞায় পড়েন না।

 বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম যদিও 'নিরীশ্বরবাদী' অর্থাৎ ঈশ্বর বা পরমাত্মায় বিশ্বাসী নয়, তবু এই দুই ধর্মকে 'নাস্তিক' বলে চিহ্নিত করলে ভুল করা হবে। কারণ, এই দুই ধর্মই আত্মায় বিশ্বাসী এবং হিন্দু ধর্মের প্রভাবে, জন্মান্তরে বিশ্বাসও প্রবল। বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মে বিশ্বাসীরাও তাঁদের ধর্মের বিধানকে তাঁদের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচার বা দেশাচার বলে মান্য করেন।

 সাংখ্য ও ন্যায়বৈশেষিক দর্শনের অবস্থা বেশ গোলমেলে। চিন্তায় কিছুটা বস্তুবাদের ছোঁয়া থাকলেও আত্ম-অদৃষ্ট-কর্মফল-পুনর্জন্ম-চতুর্বর্ণ ইত্যাদি বিষয়কে মেনে নিয়ে স্ববিরোধিতার আবর্তে পাক খাচ্ছে।

 'নাস্তিকতাবাদ' শব্দটি আমরা কখনও কখনও 'যুক্তিবাদ’ বা ‘বস্তুবাদ' শব্দের পরিবর্ত হিসেবে ব্যবহার করি। যেমন—বিজ্ঞান যতই এগুচ্ছে, ততই নাস্তিকতার পথে হাঁটছে'। বাক্যটিতে 'নাস্তিকতা' শব্দটি ব্যবহার না করে 'যুক্তিবাদ' বা 'বস্তুবাদ’ শব্দটি নিয়ে এলে বাক্যটি আরও সুবিন্যস্ত হতো। কারণ, সাধারণভাবে, মূলগতভাবে ‘নাস্তিকতাবাদ' বলতে বুঝি সেই মতবাদ, যা আত্মা-পরমাত্মার অস্তিত্বকে বিশ্বাস করে না, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিধানকে মান্য করে না। মানবতাবাদ'-এর সঙ্গে 'নাস্তিকতাবাদ’-এর মিল এইখানে যে, মানবতাবাদও আত্মা-পরমাত্মার অস্তিত্বকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিধানকে মান্য করে না। অমিলও প্রচুর।

 নাস্তিকতাবাদে যুক্তিহীন অধ্যাত্মবাদী চিন্তাকে বাতিল করার ঝাঁজ যতখানি উপস্থিত, ততখানিই অনুপস্থিত ভবিষ্যম্মুখী মানবতাবাদী সমাজ সচেতনতা বোধ। বহুক্ষেত্রেই নাস্তিকদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী, উন্নাসিকতা, আর্থ-সামাজিক ও সমাজ-সাংস্কৃতিক বিষয়ে স্বচ্ছ ও সুসংবদ্ধ চিন্তার অভাব। যাই হোক, আমরা নিশ্চয়ই বলতে পারি, শুধুমাত্র আত্মা-পরমাত্মার অস্তিত্বকে এবং প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিধানকে অস্বীকার করাই সাম্যের সুন্দর সমাজ গড়ার পক্ষে অবশ্যই যথেষ্ট নয়। কারণ, 'নাস্তিকতাবাদ’ শব্দটি সাধারণত যে অর্থে ব্যবহৃত হয়, তাতে অনুপস্থিত থাকে মানবিক মূল্যবোধের নিরিখে নিজের জীবনচর্যাকে পরিচালিত করে সমাজ-বিকাশকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা।

O

নাস্তিকতাবাদে যুক্তিহীন অধ্যাত্মবাদী চিন্তাকে বাতিল করার ঝাঁজ যতখানি উপস্থিত, ততখানিই অনুপস্থিত ভবিষ্যৎমুখী মানবতাবাদী সমাজ সচেতনতা বোধ।

O

 এই প্রসঙ্গের সূত্র ধরে এটুকু মনে করিয়ে দিতে চাই, ভারতবর্ষের নাস্তিক্যবাদ দর্শনের এক বিরাট অংশ জুড়ে থাকা চার্বাক দর্শনে আর্থসামাজিক

১৮৯