বিশ্বাসকে মেনে নেওয়া আর যাই হোক, যুক্তিবাদী মানসিকতার লক্ষণ নয়। দর্শন সম্পর্কে অতি অল্প জানা মানুষও জানেন, আলোচ্য ওইসব দার্শনিকদের কেউই আধুনিক অর্থে 'যুক্তিবাদী' ছিলেন না।
সাধারণ বুদ্ধির মানুষদের যা জানা, তা কি এইসব বুদ্ধিজীবী জ্ঞানবাবাদের অজানা?
একজন 'জ্ঞানবাবা' এমনটা লিখলে না হয় সেটা তাঁর অজ্ঞানতা বলে ভাবার অবকাশ থাকলেও বা থাকতে পারত। কিন্তু তা তো নয়! সাম্প্রতিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত লেখা-পত্তর চোখ বোলালেই দেখতে পাব এমন হাস্যকর মিথ্যে একগুচ্ছ ‘জ্ঞানবাবা'দের কলম থেকে নিঃসারিত হয়েই চলেছে।
কেন এমন ছেলেমানুষী মিথ্যে প্রচার করা হচ্ছে? উদ্দেশ্যহীন কোনও পাগলামী কি প্রচার মাধ্যমগুলোতে ভর করেছে? নাকি এর পিছনে রয়েছে কোনও গভীর গোপন উদ্দেশ্য?
কেউ কেউ এর পিছনে উদ্দেশ্যের পরিবর্তে লেখকদের অজ্ঞতাকে দায়ী করতে পারেন। কিন্তু এসব লেখা যে অজ্ঞতার ফলশ্রুতি নয়, তারই একটা প্রমাণ আপনাদের সামনে তুলে দিচ্ছি।
স্পিনেজো থেকে হেগেলকে যুক্তিবাদী বলে 'আজকাল' পত্রিকায় সোচ্চার হওয়া এই লেখকটি ১৯৯২ সালের যুক্তিবাদী পত্রিকার তৃতীয় সংখ্যায় স্পিনোজা থেকে হেগেলকে ভাববাদী দার্শনিক হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
মাত্র তিন বছরে কী এমন হল যে ‘পত্রবীর' বাবুটিকে ডিগবাজি খেতে হল?
বাবু-বিপ্লবীটির গভীর গোপন ষড়যন্ত্র বুঝতে কোনও অসুবিধে হয় না, যখন দেখি তিনি 'আজকাল'-এর ওই লেখাটিতেই জানাচ্ছেন, “কার্ল-মার্কস তাঁর দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন কান্ট, হেগেল এবং ফয়ারবাখকে দুরন্ত খণ্ডণের মধ্য দিয়ে।”
অর্থাৎ, লেখক পাঠক-পাঠিকাদের মগজে ঢোকাতে চাইলেন—যুক্তিবাদের এইসব পীর-পয়গম্বরদের কুযুক্তিকে খণ্ডন করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কাল মার্কসের বস্তুবাদী দর্শন। অর্থাৎ কার্ল মার্কসের দর্শন ছিল যুক্তিবাদ বিরোধী। কিন্তু বলাই বাহুল্য, মার্কসীয় দর্শন যুক্তিবাদের পথ ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই জ্ঞানদানকারী লেখক নিঃসঙ্গ নন। সঙ্গী আরও অনেক জ্ঞানবাবা'ই এই একই নিপাট মিথ্যে প্রচার করে চলেছেন।
ওই লেখক 'আজকাল'-এর এই লেখাটিতে শুধু এপর্যন্ত বলেই কিন্তু থেমে থাকেননি। আরও একটু এগিয়ে বলেছেন—অনেক ক্ষেত্রেই যুক্তিবাদী আন্দোলন আখেরে বুর্জোয়া মতাদর্শকে শক্তিশালী করবে।
এতক্ষণে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরুল! মজাটা হল, এই একই ধরণের বক্তব্য অনেক 'জ্ঞানবাবা'দের কণ্ঠে ও কলমে সম্প্রতি উৎসারিত। উদ্দেশ্য স্পষ্ট। অসাম্যের সমাজ ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যুক্তিবাদী চিন্তার আগ্রাসনকে
১৯৯