পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আন্দোলনে জনগণকে বিশালভাবে সমাবেশিত করে মূলস্রোত তৈরি করায় সরকারি বা বিদেশি সাহায্য পুষ্ট কোনও ভাড়াটে আন্দোলকদের পক্ষে আমাদের পাল থেকে হাওয়া কেড়ে নেওয়া ছিল একান্তই অসম্ভব। তাই কি আমাদের সমিতির কাছাকাছি নাম রাখা হয়েছে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা তুলতে?

 ‘ভারতীয় যুক্তিবাদী সংসদ'-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডঃ বেলা দত্তগুপ্তের কুসংস্কার প্রসঙ্গে রাখা একটি সাম্প্রতিক বক্তব্যের দিকে প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের নজর আকর্ষণ করছি।

 “শিশুদের কোমরে তামার পয়সা বাঁধার চল আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। অনেকেই তা কুসংস্কার বলে চিহ্নিত করেন। কিন্তু একথা এখন চিকিৎসাশাস্ত্রে সর্বজনবিদিত যে মানুষের দেহে তামা একটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ধাতু এবং সুস্থ স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তা অত্যন্ত দরকারও। তাই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে গিয়ে অনেক সময়ই যা বলা হয় তা নিতান্তই অসার, অনেকটাই বৃটিশদের কাছ থেকে যান্ত্রিকভাবে ধার করা চিন্তার পরিণতি।”

 বক্তব্যটি প্রকাশিত হয়েছিল ২ সেপ্টেম্বর '৯৪-এর 'যুগান্তর' দৈনিক পত্রিকায়। যে প্রতিবেদনে বক্তব্যটি প্রকাশিত হয়েছিল, তার লেখক ভারতীয় 'যুক্তিবাদী সংসদ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক শমিত কর। অতএব বক্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ এখানে খাটে না।

 আসুন, এবার আমরা দেখি ডঃ দত্তগুপ্তের বর্ণিত 'চিকিৎসাশাস্ত্রে সর্বজনবিদিত' বাস্তবিকই কতটা 'সর্বজনবিদিত'।

 তারিখটা ২৬জুন। সাল ১৯৮৬। কলকাতার রাজাবাজারে অবস্থিত ‘সাইন্স কলেজ'-এ দীর্ঘ আলোচনার পর ভারতের বিশিষ্ট ১৮ জন বিজ্ঞানী একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। প্রস্তাবটির একটি অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি:

 “আমাদের শরীরে রক্ত আছে। প্রয়োজনে বাহির হইতে সংগ্রহ করিয়া রক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও ব্যক্তি যদি হঠাৎ দাবি করিয়া বসেন পশু বা মানুষের রক্ত গায়ে মাখিয়াই শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করা সম্ভব, তাহা হইলে তাহার মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে সন্দেহ জাগে। কেহ যদি প্রশ্ন করিয়া বসেন রক্তস্বল্পতার ক্ষেত্রে চিকিৎসাশাস্ত্রে আয়রণ ট্যাবলেট-ক্যাপসুল ইত্যাদির প্রয়োগবিধি আছে, অতএব লৌহ-আংটি ধারণে ওই একই কার্য সমাধা হইবে না কেন? তবে প্রশ্নকর্তার কাণ্ডজ্ঞান বিষয়ে সন্দিহান হই। এইরূপ প্রশ্নকর্তা তাঁহার নিজের রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে ভারি লৌহখণ্ড শরীরের সর্বত্র বাধিয়া রাখিয়া পরীক্ষা করিলেই তাঁহার প্রশ্ন ও বক্তব্যের অসারতা বুঝিতে পারিবেন।”

 এই বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তাব জানতে দেখতে পারেন, 'অলৌকিক নয়, লৌকিক' গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে।

 এতো গেল বিজ্ঞানীদের সর্বজনবিদিত বক্তব্য, বিজ্ঞানের বক্তব্য। তা বিজ্ঞানবিরোধী বক্তব্য রাখার অধিকার ভারতীয় যুক্তিবাদী সংসদের সভাপতির

২০৪