পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

“পরিবেশ দূষণ, রোগ প্রতিরোধ, জলসেচ, মৃত্তিকার পরীক্ষা, কীটনাশকের প্রতিক্রিয়া, পারমানবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা, জ্বালানী ও শক্তির সমস্যা ইত্যাদি সময়োপযোগী সমস্যা বিষয়ে মানুষের মধ্যে ক্রমাগত প্রচার চালান বিজ্ঞান আন্দোলনের একটি প্রধান কাজ।”

 আরও কাজের মধ্যে বিজ্ঞান প্রদর্শনী, বিজ্ঞান মেলা, মানুষের কাছে বিজ্ঞানের সুযোগ-সুবিধে পৌঁছে দেওয়ার কথা আছে। যেসব কথা আছে সে সব কথা নিশ্চয়ই ভাল। কিন্তু আমাদের সঙ্গে ওদের সংগঠনের মূলগত পার্থক্য বিজ্ঞান আন্দোলনের সংজ্ঞা নিয়েই। ওরা মনে করেন—বিজ্ঞানের সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধে পৌঁছে দেওয়াই বিজ্ঞান আন্দোলন। আমরা মনে করি-বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ গড়ার আন্দোলনই বিজ্ঞান আন্দোলনের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

 মঞ্চে কিছু বিধি নিষেধও আছে। ধর্মে বিশ্বাসী মানুষদের চোখে ধর্মগুরু ও জ্যোতিষীরা শ্রদ্ধেয়। তাই ধর্মগুরু ও জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে 'রা'-কাটা বারণ। কারণ এতে করে বিশ্বাসী মানুষদের বিশ্বাসে আঘাত হানা হবে। মঞ্চের লক্ষ্য, জনচেতনাকে উঠিয়ে আনা নয়। জনচেতনার মনে নিজেদের নামিয়ে আনা। নির্বাচন-নির্ভর রাজনৈতিক দলের গণসংগঠন হলে বুঝিবা এভাবেই চলতে হয়। কারণ, ওদের কাছে শেষ পর্যন্ত মানুষকে যুক্তিবাদী করার চেয়ে মানুষের ভোট পাওয়াটাই জরুরী হয়ে ওঠে। আর তাই তো, ওদের সংগঠনে আমজনতাকে সামিল করতে খোলা-মেলা মুক্ত হাওয়া। মঞ্চের আঞ্চলিক স্তর থেকে কেন্দ্রীয় স্তর পর্যন্ত সর্বত্রই তাই পুজোকমিটি-তাগা তাবিজ বিজ্ঞান আন্দোলন ইত্যাদি স্ববিরোধিতা পরম নিশ্চিন্তে সহাবস্থান করে।

 '৯৪-এর কলকতা পুস্তক মেলায় মঞ্চ বইয়ের দোকান দেয়। নানা বইয়ের পাশে কুসংস্কারের ধারক-বাহক বইও স্টলে সহাবস্থান করে। এবং তা যে অনবধানতায় নয়, এটা বুঝতে পারি, যখন আমাদের সমিতির তরফ থেকে তাদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরও দেখি যথা পূর্বং তথা পরং।

 একটি ঘটনা। ১৯৯৩-এর সেপ্টেম্বর। রামকৃষ্ণ মিশন ‘বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন'-কে রাজনৈতিক স্টার মেগাস্টারের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির মেলবন্ধনকে নতুন মাত্রা দিতে সচেষ্ট। শহর কলকাতার হোর্ডিংগুলো দাঁড়িয়ে আছে ধর্ম সম্মেলনে রাষ্ট্রনেতাদের উপস্থিতির সদম্ভ ঘোষণা নিয়ে। ভারতীয় সংবিধানে দেওয়া 'ধর্মনিরপেক্ষতা'-র ব্যাখ্যাকে পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্রীয় পদাধিকারিদের ‘বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন'-এ অংশগ্রহণ থেকে বিরত করতে যুক্তিবাদী সমিতি তখন জোরাল আন্দোলন গড়ে তুলেছে। আমাদের সমিতি সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের কাছে, এবং দল ও নেতাদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পেয়ে আমরা বাস্তবিকই আপ্লুত। ঠিক এমনি সময়ে বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনের আহ্বায়ক স্বামী লোকেশ্বরান্দ’র সুরে সুর মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ'-এর সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য

২০৭