পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অর্থাৎ, ঈশ্বর বিশ্বাস কুসংস্কার তো নয়ই, বরং এই বিশ্বাস সমাজের সার্বিক উন্নয়নে সাহায্য করে এবং অধ্যাত্মিক বোধ বা আত্মা সংক্রান্ত মতবাদ বিষয়ে বোধের উন্মেষে সাহায্য করে। এরপর মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

 প্রগতিশীল পত্রিকা হিসেবে পরিচিত 'অনুষ্টুপ' পত্রিকা ৯৫'-এর কলকাতা পুস্তক মেলায় বিশেষ বিজ্ঞান সংখ্যা প্রকাশ করল। সেখানে বিজ্ঞানে অবগাহন প্রবন্ধটির উপসংহারে লেখক জানালেন, “বিজ্ঞানমনস্কতা একজন ব্যক্তি মানুষের আত্মিক উন্নতি ও অধিকার আদায়ের সহায়ক শক্তি হতে পারে, কিন্তু নৈতিকতা ছাড়াও আবেগ-অনুভূতির জগতে বিজ্ঞানের অনুপ্রবেশ এখনো স্পষ্ট নয়।...তাই ফের খেয়াল রাখতে হয় বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতায়। বিজ্ঞান মানবপ্রজাতির বহির্জগত ও অন্তর্জগতের সার্বিকমুক্তির মন্ত্র হাতে বসে নেই, বিজ্ঞান কোনো মুক্তিদাতা বা পরমাত্মার বিকল্প নয়।”

 প্রবন্ধটির লেখক ‘উৎস মানুষ' পত্রিকার সম্পাদক। ধরে নিলাম লেখক অনবধানতায় 'আত্মিক' শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আসলে মূল্যবোধ বা 'নীতিবোধ'-জাতীয় কোনও শব্দ ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। তবু বলব, এই ধরনের 'ভাববাদী' শব্দ ব্যবহার বিষয়ে তাঁর আরও একটু সতর্ক থাকা উচিত ছিল। কিন্তু তারপর? তিনি সরাসরি বিজ্ঞানের বিচরণ ক্ষেত্র নিয়ে ‘লক্ষণের গণ্ডি টানলেন। ভবিষ্যৎ বিষয়েও নিদান দিলেন, বিজ্ঞান সার্বিক মুক্তির পথ হতে পারে না।

 বাস্তবে কিন্তু বিজ্ঞানই মুক্তি দেয়। অজ্ঞানতা থেকে মুক্তি। বিজ্ঞানের পথ ধরেই গড়ে ওঠে বৈজ্ঞানিক মূল্যবোধ। সমাজবিজ্ঞানই আমাদের নৈতিকতা বুঝতে সাহায্য করে এবং গড়তে সাহায্য করে, সাম্যের সমাজ গড়ার পথ দেখাতে পারে। মনোবিজ্ঞান ব্যাখ্যা দিতে পারে আবেগ-অনুভূতির এবং দেয়ও। মানুষের মুক্তি যদি কেউ দিতে পারে, তবে তা বিজ্ঞানই। 'পরমাত্মা'-জাতীয় কেউ কখনও মুক্তিদাতা নয়। 'পরমাত্মা’-জাতীয় অতীক চিন্তা বরং শৃঙ্খলিত করে মানুষের মননকে, মানুষের ব্যক্তি সত্তাকে।

 বছর কয়েক আগে ‘উৎস মানুষ' পত্রিকাতে একই সংখ্যায় দুটি বইয়ের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছিল। একটি অলৌকিক নয়, লৌকিক প্রথম খণ্ডের, আর একটি মার্টিন গার্ডনার-এর ‘সাইন্স: গুড, ব্যাড অ্যাণ্ড বোগাস'। 'অলৌকিক নয়, লৌকিক' বইটি যে কত 'ওঁচা", কত ‘ভুসি' মাল তা প্রচুর আবেগের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছিল। বইটি যে অনেকের কাছেই বেজায় বাজে লাগে, তা আমার অজানা নয়। সমালোচকের বাজে লাগার অধিকার নিশ্চয় আছে। স্বীকার করি। কিন্তু 'উৎস মানুষ'-এই করেই থামল না। একই বিষয়ের দুটি বইয়ে কত তফাৎ, দেখাতে 'মডেল' বা আদর্শ হিসেবে খাড়া করল মার্টিন গার্ডনারের বইটিকে। ছত্রে ছত্রে আবেগ ঢেলে বোঝাল গার্ডনার কী দারুন যুক্তিবাদী।

 গার্ডনার কতখানি যুক্তিবাদী? বোঝাতে শুধু এটুকু বললেই বোধহয় যথেষ্ট হবে, তিনি তাঁর বইতেই স্পষ্ট করে লিখেছেন, তাঁর ঈশ্বর বিশ্বাস ও আত্মায় বিশ্বাস করার কথা। 'উৎস মানুষ’-এর প্রেরণা পাওয়ার মত আদর্শই বটে!

২০৯