পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মাঝিরা অবাক। এক মাঝি জিজ্ঞেস করল, “ঠাকুর, এমন ক্ষমতা পাইলা কেমনে?”

 অমনি বাবার মাথায় চিন্তা চম্‌কাল—সত্যিই তো, কী এমন মন্ত্র লেখা আছে কাগজের টুকরোয়, যার শক্তিকে জলে হাঁটছি? বাবা পকেট থেকে কাগজের টুকরোটা বের করলেন। ভাঁজ খুললেন। ও হরি, এতে যে কিছুই মন্ত্র-টন্ত্র লেখা নেই। লেখা আছে—‘রাম রাম রাম’। মাত্র তিনবার ‘রাম’ লিখে পকেটে রাখলে হেঁটে নদী পার হওয়া যায়!! বাবার বিশ্বাস হল না। ভয় পেলেন। ‘রাম’ নামে পদ্মা পারা-পার হওয়ার প্রচেষ্টা তাঁর কাছে মুহূর্তে অসম্ভব বলে মনে হল। আর অমনি বাবা ডুবে গেলেন। নেহাত সাঁতার জানতেন, আর পাশেই নৌকো ছিল বলে বেঁচে গেলেন।

 এই গল্পটা (মাস্টারমশাইয়ের কথা মত 'সত্যি' ঘটনা) বলে মাস্টারমশাই যে নীতি উপদেশ দিয়েছিলেন, সেটা হল—“বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর’’।

 প্রবীণ সাংবাদিক এবং ভাগ্যফল, আত্মার অবিনশ্বরতা ও ঈশ্বরের অস্তিত্বে অন্ধ বিশ্বাসী প্রণবেশ চক্রবর্তী মশাই যুক্তিহীন বিশ্বাসের পক্ষে জোরালো যুক্তি খাড়া করে বলেছেন, (সম্পাদকীয় প্রবন্ধ, যুগান্তর, ৩ মার্চ ১৯৯৪) “জীবনের সব কিছুই কি যুক্তিতর্কের উপর দাঁড়িয়ে আছে, জীবনের সকল সমস্যার সমাধানই কি যুক্তিতর্কের মাধ্যমে করা সম্ভব? কথায় বলে ‘বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দূর’...আমরা যখন ট্রেনে উঠি—তখন কি আমাদের রেল ইঞ্জিনের উপর নির্ভরতা, ড্রাইভারের উপর ভরসা স্থাপন ইত্যাদি যাবতীয় ব্যাপারগুলি নিছকই বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে থাকে না?”

 সালটা ৯৫। দোলের আগের রাতে আমরা কয়েক বন্ধুতে যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষ থেকে যাচ্ছিলাম কল্যাণীর ‘ঘোষপাড়া’য়। উদ্দেশ্য—সতী মেলা নিয়ে একটা তথ্যচিত্র ভোলা। সতী মেলার কল্যাণে ট্রেনে বুকের পাঁজরা-ভাঙা ভিড়। সহযাত্রী এক বাউলকে জিজ্ঞেস করলাম, “গান গাওয়ার আনন্দে সতী মেলায় যাচ্ছেন, না সতী মা’র থানের অলৌকিক মাহাত্ম্যে বিশ্বাসের টানে যাচ্ছেন?”

 “বিশ্বাস যে কী জিনিস, যে করে সে জানে। আপনাকে একটা ঘটনা শোনাই। আমাদের গ্রামে থাকত হানিফ। খেতে জন খাটত। ধান খেতের ধেড়ে ইঁদুর ধরে রান্না করে খাওয়ার রেওয়াজ আছে আমাদের গ্রামে। হানিফ এমনি একটা ধেড়ে ইঁদুর ধরতে গিয়ে ইঁদুরের গর্তে হাত ঢুকিয়ে ইঁদুর পাওয়ার বদলে পেল ইঁদুরের কামড়। তার দিন কয়েক পর ইঁদুরটাকে ধরবে বলে ওই গর্তটা শাবল মেরে ভাঙতেই গর্ত থেকে বেরিয়ে এল একটা কেউটে। হানিফের বুঝতে বাকি রইল না, সেদিন ওকে কেউটেই কেটেছিল। এতদিন ইঁদুরে কাটার বিশ্বাসই ওকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। কেউটে দর্শনে সে বিশ্বাস ভেঙে যেতেই

২৪