আমাদের ‘জাতির জনক’-এর বক্তব্যে চিন্তার মূর্খতা এতই বিরাট আকারে ধরা পড়ে সে, এ বিষয়ে আলোচনা একান্তভাবেই অবান্তর।
মাস্টারমশাইয়ের গল্প (ঘটনা না বলে আমরা একে গল্পই বলব) প্রসঙ্গে আমাদের উত্তর এমনটাই বেরিয়ে আসা স্বাভাবিক—তাত্ত্বিকভাবেই কোনও মানুষের পক্ষে কৌশলের সাহায্য ছাড়া জলের উপর দিয়ে এ’ভাবে হাঁটা সম্ভব নয়। আজ পর্যন্ত কেউ প্রকাশ্যে হেঁটেও দেখাননি। এর পরও কেউ যদি এমন হাঁটার দাবি করেন, তবে তাঁকে দাবির পক্ষে প্রমাণও হাজির করতে হবে বই কি। প্রমাণ না দিয়ে যে কেউ যা খুশি উদ্ভট দাবি করলেই যদি মেনে নিতে হয়, তাহলে তো বেজায় মুশকিল। আর মুশকিল সবচেয়ে বেশি মনোরোগ চিকিৎসকদের। তাঁদের কাছে নিত্যই এমন প্রচুর মানুষ হাজির হন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দাবি করেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তাঁর মাথার সমস্ত চিন্তা ধরে নিচ্ছেন, এবং সেই চিন্তাকে কাজে লাগিয়েই আমেরিকা সব দেশের ওপর ছড়ি-ঘোরাচ্ছে। কেউ বা মনে করেন, তিনি যে কোনও পশুপাখির ভাষা বুঝতে পারেন। কেউ বা ভাবেন প্রতি রাতে তিনি একটা সাপ হয়ে যান। আমি এক উগ্র ধর্মীয় সংগঠনের নেতাকে পেয়েছিলাম, যিনি মনে করতেন বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড-ঈশ্বর-আল্লা সব তারই সৃষ্টি।
আমার দেওয়া উদাহরণগুলোর কথা শুনে মাস্টারমশাই বলতে পারেন—বাবার ঘটনার বিশ্লেষণ করতে এঁদের টেনে আনার কোনও মানেই হয় না। কারণ, এঁরা পাগল। বাবা কখনই পাগল ছিলেন না।
মাস্টারমশাইয়ের কথাগুলো আমরা যদি সত্যি বলেই ধরে নিই, অর্থাৎ মাস্টারমশাইয়ের বাবা এমনটাই বলেছিলেন, তবে মাস্টারমশাইকে আমাদের একটি রূঢ় সত্যের সামনে দাঁড় করিয়ে দিতে হবে—যাঁরা মিথ্যে কথা বলেন, তাঁরাও কারও না কারও মা-বাবা-ভাই-বোন-মাস্টারমশাই ইত্যাদি, ইত্যাদি। এমনটা হতে পারে, মাস্টারমশাই বাবার কাছ থেকে ঘটনাটা শুনে বিশ্বাস করেছিলেন। মিথ্যেকেই সত্যি বলে বিশ্বাস করেছিলেন। ‘অলৌকিক ঘটনা ঘটা সম্ভব’, এই আজন্মলালিত ধারণা থেকেই বিশ্বাস করেছিলেন। তাত্ত্বিকভাবেই যেহেতু কৌশল ছাড়া জলে হাঁটা সম্ভব নয়, তাই এর বাইরে কোনও সিদ্ধান্তে যাওয়াও আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
এবার আসুন, সাংবাদিক প্রণবেশ চক্রবর্তীর বক্তব্যের পোস্টমর্টেম-এ বসি আমরা। প্রণবেশবাবুর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে যে যে উত্তর উঠে আসে:
না, জীবনের সব কিছুই যুক্তিতর্কের উপর দাঁড়িয়ে নেই। তার হাতে-গরম উদাহরণ—প্রণবেশবাবুর এই যুক্তিহীন বক্তবা।
অবশ্য এমনও হতে পারে, আমার এই বক্তব্যে গোড়ায় গলদ রয়ে গেছে। প্রণবেশবাবু হয়তো এমন যুক্তিহীন বক্তব্য পেশ করেছেন বিশেষ উদ্দেশ্যে। এবং তাঁর এই বক্তব্য পেশের পিছনে রয়েছে গভীর যুক্তি-বুদ্ধি-ব্যক্তিস্বার্থ-শ্রেণীস্বার্থ।