পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ফলে আপনি নিশ্চিন্তে থাকেন—ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত পরিষ্কার হবে? আপনার বাড়ির কলিংবেলটা বাজলে আপনি কারও আগমন প্রত্যাশা করে দরজা খুলতে যান না? কেন আগমন প্রত্যাশা করেন? পূর্ব-প্রত্যক্ষ জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার সাহায্যেই তো? এ পর্যন্ত ঠিক-ঠাক বলেছি তো প্রণবেশবাবু? এবার আসুন আমরা আপনার 'ট্রেন' ও 'ড্রাইভার' প্রসঙ্গে আসি। আমরা যারা রেল ইঞ্জিনের আবিস্কার থেকে শুরু করে রেল উন্নতির ইতিহাসের মোটামুটি খবরটুকুও জানি না, তারাও কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, ট্রেনে চাপলে ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। আমরা যারা জানি না, একজন যখন ড্রাইভারের পদে নিযুক্ত হন, তখন তাঁকে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে, প্রয়োজনীয় নানা ট্রেনিং-এর মধ্য দিয়ে ড্রাইভার হিসেবে গড়ে তোলা হয়, তারাও কিন্তু পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকেই জেনেছি ট্রেন চালায় ড্রাইভার। এবং ড্রাইভারই ট্রেন চালিয়ে আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। সুতরাং ‘ট্রেন' ও 'ড্রাইভার' এই দু’য়ের ক্ষেত্রেই আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতাই প্রত্যয় যোগায়—নির্দিষ্ট ট্রেনে চাপলে নির্দিষ্ট স্টেশনে নামতে পারব। ট্রেনে উঠে গন্তব্যে পৌঁছতে কোনও সুস্থ মানসিকতার মানুষকেই প্রত্যয় বিসর্জন দিয়ে অন্ধ বিশ্বাসের উপর নিজেকে সঁপে দিয়ে বসে থাকতে হয় না। জানি, এরপরও দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু তাতে আমাদের বক্তব্যই আরও বেশি করে প্রতিষ্ঠিত হয়, কারণ প্রত্যেকটা দুর্ঘটনার পিছনেই কার্য-কারণ সম্পর্ক থাকে। রেল দুর্ঘটনার পিছনে থাকতে পারে ড্রাইভারের কুশলতার অভাব (সমাজের দুনীতির অংশ হিসেবে ড্রাইভারের ট্রেনিং প্রক্রিয়ার মধ্যে ফাঁকি থাকতে পারে, যার নামই ‘কুশলতার অভাব, গার্ডের কুশলতার অভাব, ড্রাইভার বা গার্ডের অন্যমনস্কতা, গাড়ি চালাবার আগে গাড়ি পরীক্ষার ক্ষেত্রে ও রেল লাইন পরীক্ষার ক্ষেত্রে কুশলতার অভাব বা ফাঁকি, নাশকতা, যাত্রীর অসাবধানতা (যাত্রীর বহন করা দাহ্য পদার্থ থেকেও দুর্ঘটনা ঘটে, রেলের ফেরিওয়ালাদের অসাবধানতা (চা-কফি তৈরির জন্য বহন করা জলন্ত চুল্লি থেকেও দুর্ঘটনা ঘটে, টিকিট পরীক্ষক ও রেল পুলিশদের অসাবধানতা (যাঁরা যাত্রী ও ফেরিওয়ালাদের দাহ্য পদার্থ বহন আটকাতে পারেন, কিন্তু আটকান না), সিগনালম্যানের কুশলতার অভাব বা অসাবধানতা, লেভেল ক্রসিং-এর গেটকিপারদের অসাবধানতা ইত্যাদি নানা ধরনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। দুর্ঘটনার সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনা যায় যাত্রীদের সচেতনা এবং রেলকর্মীদের কুশলতা বৃদ্ধি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইন-কানুন কঠোরভাবে মেনে চলার মধ্য দিয়েই। ভাগ্যে বা পরমপিতায় বিশ্বাস সমর্পণের উপর কখনই নিরাপত্তা নির্ভরশীল নয়।

 আচ্ছা, প্রণবেশবাবু, কলিংবেলের শব্দ শুনে আপনি নিশ্চয়ই কখনও-সখনও দরজার দিকে পা বাড়িয়েছেন। আপনি নিশ্চয় শুনেছেন বা জানেন, শুকনো মাটিতে আছাড় খেয়েও মানুষ মারা যায়। আপনি যখন দরজা খুলতে এগেন, তখন কি নিজের পূর্ব অভিজ্ঞতার উপর ও দু'পায়ের উপর আস্থা রেখেই

২৮