পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দরজা খুলতে এগোন? নাকি, আত্মবিশ্বাস জলাঞ্জলি দিয়ে শুকনো মাটিতে আছাড় খেয়ে মরতে পারি ভেবে নিছকই পরম বিশ্বাসের কাছে আত্মসমর্পণ করে এগোন?

 বাস্তবিকই যদি এত বেশি বিশ্বাস নির্ভর হয়ে থাকেন, একাত্ত মানবিক কারণেই আপনার কাছে অনুরোধ রাখছি—ভাল মানসিক চিকিৎসকের সাহায্য নিন। যদি ঈশ্বর-বিশ্বাস ও নিয়তি-বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা নিয়ে এমনটা বলে থাকেন এবং প্রত্যয় অন্য রকম হয়ে থাকে, তাহলে বলব, আপনার শ্রম ও আপনার পত্রিকা কোম্পানির একগাদা নিউজপ্রিণ্ট বৃথাই ব্যয়িত হল। কারণ, আপনার ছেঁদো যুক্তির গ্যাস বেলুনটায় এতক্ষণে যে একটা বড়সড় মাপের ছ্যাঁদা হয়ে গেছে, সেটা তো বুঝতেই পারছেন।

 এখন আমরা সতী-মেলার সহযাত্রী বাউলের বক্তব্য বিশ্লেষণে কিঞ্চিৎ তৎপর হই আসুন। বাউলের কথা মত, সাপের কামড়কে ইঁদুরের কামড় বলে বিশ্বাস করায় বিষাক্ত সাপের বিষও শরীরে নিষ্কর্মা ছিল।

 কিঞ্চিত সাধারণজ্ঞান প্রয়োগেই বোঝা যায় শরীরে বিষক্রিয়া কখনই বিশ্বাস বা অবিশ্বাস নির্ভর নয়। এই সত্যটুকু জানার জন্য বাস্তবিকই শারীর-বিজ্ঞান নিয়ে বিস্তর পড়াশুনার কোনও প্রয়োজন হয় না। সত্যি কথা বলতে কি ‘সামান্য' পড়াশুনার ও প্রয়োজন হয় না। খাবারে বিষ মিশিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্রের ইতিহাস বহু প্রাচীন। বড়যন্ত্রকারীরা বিষ মেশাতে শারীর-বিজ্ঞান পড়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি। সুখাদ্য বিশ্বাসে বিষ-খাবার গ্রহণের জন্য বিষ কিন্তু তার ক্রিয়া বন্ধ রাখেনি। এরপর নিশ্চয়ই বাউলের গল্পটা যে নেহাৎই 'গপ্পো', এবিষয়ে কোনও সন্দেহের অবকাশ থাকে না।

 'বিশ্বাসে মিলায় বস্তু'র দোহাই দিয়ে ঈশ্বরতত্বে ও অলৌকিকতন্ত্রে বিশ্বাস স্থাপন করা যে নেহাতই বড় মাপের বোকামি, এটা নিশ্চয়ই এতক্ষণের আলোচনায় স্পষ্টতর হয়েছে।


কারণ: আট

‘ঈশ্বর যদি অলীকই হবেন, তাহলে পৃথিবীর সবচয়ে বেশি মানুষ কেন আজও ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসী?

উপরের এই প্রশ্নটাই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নানাভাবে প্রায়ই আমাদের শুনতে হয়। যুক্তিবাদীদের বিপক্ষে ঈশ্বরবাদীদের এই জোরালো সওয়ালের জোরটা নেহাতই সংখ্যাধিক্যের, ঈশ্বর বিশ্বাসীদের সংখ্যাধিক্যের। উত্তরটা পেতে আমাদের ফিরে তাকাতে হবে ইতিহাসের দিকে।

 মাত্র শ’পাঁচেক বছর আগের কথা। পোল্যাণ্ডের নিকোলাস কোপারনিকাস

২৯