পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মহিমাম্বিত করার প্রচেষ্টা। শুধু কি তাই, শাসক ও শোষকদের শাসন-শোষণের অধিকারকে ধর্মীয় সমর্থনও জানানো হয়েছে।

 হিন্দুদের অপৌরুষেয় ধর্মগ্রন্থে বাড়তি যা তা হল, চতুর্বর্ণ প্রথা তৈরি করে কৃষক-শ্রমিক শ্রেণীকে নিংড়ে নেওয়ার নিষ্ঠুর প্রয়াস।

 এইসব ধর্মগ্রন্থকে ঈশ্বর-রচিত বলে মেনে নিলেই স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গেই সারিবদ্ধ কিছু চিন্তার উদয় হয়।

 এক: ঈশ্বর কোনও নিরাকার শক্তি নন।

 দুই: ঈশ্বর নারী বিরোধী, অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষের বিরোধী ও নিপীড়ণকারী।

 তিন: ঈশ্বর নারীদের সঙ্গে সঙ্গে কৃষক-শ্রমিকদের প্রতি নিষ্ঠুর মনোভাবাপন্ন।

 চার: ঈশ্বর তোয়াজ পছন্দ করেন। চাটুকারিতা পছন্দ করেন|

 এরপর কিছু প্রশ্ন এসে হাজির হয়—ঈশ্বর যা বলেন, তা সবই কি সত্যি? বাস্তবিকই কি ঈশ্বরের প্রার্থনা পূরণের ক্ষমতা আছে? আদৌ কি সকলের প্রার্থনা পূরণের ক্ষমতা ঈশ্বরের পক্ষে থাকা সম্ভব? দুই শত্রপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের প্রার্থনা জানালে দুজনেরই জয় এনে দেওয়া কি ঈশ্বরের পক্ষে সম্ভব? আদৌ নয়।

O

আদৌ কি সকলের প্রার্থনা পূরণের ক্ষমতা ঈশ্বরের পক্ষে থাকা সম্ভব? দুই শত্রুপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের প্রার্থনা জানালে দুজনেরই জয় এনে দেওয়া কি ঈশ্বরের পকে সম্ভব? আদৌ নয়।

O

 যে ঈশ্বরের নির্ধারিত নীতি অমানবিক, যে ঈশ্বর মানুষে-মানুষে বিভাজনের স্রষ্টা, শোষণ ও নিপীড়নের পৃষ্ঠপোষক, সেই ঈশ্বরকে 'ভাল', 'করুণাময়', 'পূজনীয়’, ‘শ্রদ্ধেয়', ইত্যাদি বিশেষণে বিশেষিত করা কি মিথ্যা উক্তি নয়?

 এত মিথ্যাচারিতায় ভরা, নিষ্ঠুর, অমানকি ধর্মগ্রন্থগুলো বাস্তবিকই যদি অপৌরুষেয় হয়, তবে বলতেই হয় ঈশ্বর চাটুকার পরিবৃত হয়ে থাকতে চাওয়া এক অসৎ ও নিষ্ঠুর সাকার কিছু এবং একই সঙ্গে শোষক ও শাসকদের পৃষ্ঠপোষক। ঈশ্বর যদি বাস্তবিকই দুর্নীতি ও অসততার মূর্ত প্রতিমূর্তি না হন, তবে একথাই স্বীকার করতে হয়, অসৎ ও নিষ্ঠুর শাসক-শাসকদের টিকে থাকার স্বার্থে এইসব ধর্মগ্রন্থগুলো বুদ্ধিজীবী, সুবিধাভোগী পুরোহিতরা ও ধর্মগুরুরাই রচনা করেছিলেন এবং অপৌরুষেয় বলে প্রচার করেছিলেন। উদ্দেশ্যে অতি স্পষ্ট শোষক-শাসক-পুরুষতন্ত্রের স্বার্থ রক্ষা করা।

৩৬