পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পর্যন্ত ঈশ্বর বিশ্বাসী হওয়াটা কি ঠিক? আপনি যদি ঈশ্বর দেখার একটা ব্যবস্থা করে দেন, বা কোনও অলৌকিক ক্ষমতা দেখান, তারপর আমার পক্ষে ঈশ্বরে বিশ্বাসী হওয়াটা যুক্তিপূর্ণ হবে।

 উত্তরে অনুকূলচন্দ্র যা বলেছিনে, তা মোটামুটি এই: আজ কিছুই দেখাচ্ছি না। না ঈশ্বর, না অলৌকিক ক্ষমতা। আজ শুধু রবীন্দ্রনাথের সেই কথাটা মনে করিয়ে দিই, “পৃথিবীতে কত কিছু তুমি জানো না, তাই বলে সে সব কি নেই? কতটুকু জানো? জানাটা এতটুকু, না জানাটাই অসীম। সেই এতটুকুর উপর নির্ভর করে চোখ বন্ধ করে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া চলে না।”

 অনুকূলচন্দ্র তারপর কোনও দিনই আমাকে ঈশ্বর বা অলৌকিক ক্ষমত দেখাননি। তবে তিনি পরিবর্তে যে কথাগুলো বলেছিলেন, সে কথা বহুবার বহুজনের মুখ থেকেই শুনতে হয়েছে। তাঁদের বক্তব্যের মূল সুর এই রকম-যারা ঈশ্বরে অবিশ্বাস করে, তা না জেনেই করে, অজ্ঞতা থেকেই করে, অনেক কিছু জানার অহমিকা বোধ থেকেই করে। যদি জানত তাদের জানাটা কত ক্ষুদ্র, আর না জানাটা কত অসীম, তা হলে এভাবে কোনও কিছুকে এক কথায় নাকচ করত না, ঈশ্বরের অস্তিত্বকে তো নয়ই। আমাদের উচিত যুক্তিনিষ্ঠ মানসিকতার পরিচয় দিয়ে না জানা বিষয়কে নাকচ না করা।


 প্রিয় পাঠক-পাঠিকারা, আপনারা একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন, এই ধরনের যুক্তির সাহায্যে যে কোনও অস্তিত্বহীনের অস্তিত্বই প্রমাণ করা যায়। যেমন ধরুন, আমি যদি বলি, আকাশ থেকে মাঝে-মাঝে ডিম বৃষ্টি হয়। তবে এই ডিম-বৃষ্টি কখন কোথায় হবে, তার আগাম হদিস অবশ্য দেওয়া সম্ভব নয়। এই ডিমগুলো মাটিতে পড়ার আগেই সেগুলো ফুটে বের হয় চব্বিশ কারেট সোনার দুশো গ্রাম ওজনের একটা করে জীবন্ত পাখির পচ্চিা। বাচ্চাগুলো জন্মে মাটিতে না পড়ার আগেই উড়তে উড়তে চলে যায়।

 অনুকূলচন্দ্র ইত্যাদিদের যুক্তিতে বিশ্বাসী হলে আপনি কোনওভাবেই আমার এই বক্তব্যকে নাকচ করতে পারছেন না। আপনি কোনওভাবে যুক্তি হাজির করতে গেলে আমি বলব, “পৃথিবীর কতটুকু আপনি জানেন? এই ধরনের পাখির অস্তিত্ব বিষয়ে আপনার জানা নেই বলে এর অস্তিত্বকে আপনি অস্বীকার করতে পারেন না।”

 এই একই কারণে কতটুকু জানি মার্কা কথার ধোঁয়াশার বিভ্রান্তিতে বিভ্রান্ত হয়ে আমরা ঈশ্বর-বিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারি না। যতটুকু জানি, সেইটুকুতে আস্থা আছে বলেই পারি না।

৫২