পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই সব বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের বিশ্বাসের পিছনে রয়েছে যুক্তিহীন এক অন্ধ-বিশ্বাস। অর্থাৎ একই সঙ্গে পেশায় বিজ্ঞানী কিন্তু মানসিকতায় বিজ্ঞান-বিরোধী। এমন স্ববিরোধিতার কারণ, আমাদের সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশ।

 আপনার আশে-পাশে একটু তাকান। দেখতে পাবেন প্রায় প্রতিটি পরিবারের শিশুরাই বেড়ে উঠছে ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার মধ্যে, ঈশ্বর-বিশ্বাসের মধ্যে, আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসের মধ্যে। শিশুকে পরিবারের মানুষরা শেখান। “ঠাকুর নম কর"। শিশু দেখে 'রোজা' ‘নামাজ'। শেখে ফি হপ্তায় গির্জায় যেতে। স্কুলে পড়ে ঠাকুর-দেবতা, আল্লাহ, যিশুর নানা অলৌকিক কাহিনী! সিনেমায়, টিভিতে, যাত্রায় কত না ঈশ্বর-তত্ত্বের, ভুতুড়ে কাহিনীর, অলৌকিক-ব্যাপার-স্যাপারের ছড়াছড়ি। পরিচিত হয়, নানা ধর্মের নানা আচার-আচরণের সঙ্গে। শোনে নানা ভরের কাহিনী। কোথাও ভর করে মনসা-শীতলা-কালী কি মহাদেব, কোথাও বা ভয় করে জীন কি ফেরেস্তা। ভরগ্রস্তদের প্রতি বিশ্বাস নিয়ে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান। তাঁদের বিশ্বাস, তাঁদের মুখের কাহিনী অন্যকেও প্রভাবিত করে। প্রভাবিত করে ধর্মীয়-গ্রন্থ, প্রচারমাধ্যম ধর্মীয় উন্মাদনা। এমনই পরিবেশের মধ্যে প্রায় সকলেই বেড়ে উঠেছে, তা সে ভাল ছাত্রই হোক বা খারাপ ছাত্রই হোক। ফলে লেখা-পড়ায় ভাল ছেলে-মেয়েরাও যুক্তিহীন ধর্মীয় ধ্যান-ধারণার মধ্যেই পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার সুবাদে সাধারণভাবে দৌড়োয় ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনো করতে। আমাদের এই অনিশ্চয়তায় ভরা সমাজে ভবিষ্যতে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা এখনও এইসব বিজ্ঞান বিষয় নিয়ে পড়াশুনা শেষ করে বেরলে বেশি বলেই, ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের মা-বাবারা তাঁদের এসব লাইনে পড়তে ঠেলে দেন। ফলে এরা বিজ্ঞান শিক্ষা শুরু করে ধর্ম বিশ্বাসে গা ডুবিয়ে রেখেই। যখন সাফল্যের সঙ্গে এঁরা ছাত্রজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন তখন এঁরা—বিজ্ঞানেও থাকেন, ধর্মেও থাকেন। এঁরা জীবনের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করেন না। বিজ্ঞান এঁদের অনেকের কাছেই শুধুই একটা পেশা থেকে যায়, যেমন পেশা জমির দালালি বা আলু-পটলের ব্যবসা।

 এঁদের সকলেই যে বিজ্ঞানকে শুধু একটা পেশা হিসাবে গ্রহণ করে সুখী থাকেন, তেমন নয়। ব্যতিক্রমী কেউ কেউ বিজ্ঞানকে 'জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস', ‘বেঁচে থাকার অনিন্দ' হিসেবেই গ্রহণ করেন। কিন্তু, তাঁদেরও অনেকের মধ্যে থেকে যায় আজন্ম-লালিত ঈশ্বর-বিশ্বাস থেকে শুরু করে অনেক বিষয়েই অন্ধ-বিশ্বাস।

O

এইসব ঈশ্বর-বিশ্বাসী বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদদের কেউ যেদিন বিশ্বাসের গণ্ডি পেরিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে কোনও প্রমাণ হাজির করতে পারবেন, সেদিন তাঁদের মতকে নিশ্চয়ই আমরা মেনে নেব।

O

৫৪