এইসব ঈশ্বর-বিশ্বাসী বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদদের কেউ যেদিন বিশ্বাসের গণ্ডি পেরিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে কোনও প্রমাণ হাজির করতে পারবেন, সেদিন তাঁদের মতকে নিশ্চয়ই আমরা মেনে নেব। কিন্তু তার আগে শুধুমাত্র বিখ্যাত বিজ্ঞানীর বিশ্বাস বলে মেনে নিই কী করে? তেমন করতে হলে বহু অস্তিত্বহীন বিষয়কে এক্ষুনি-এক্ষুনি আমাদের মেনে নিতে হয়। বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ জীবনে অনেক অলৌকিকবাবার চরণেই মাথা ঠেকিয়েছেন। কিছু কিছু অলৌকিকবাবাজী-মাতাজীরা আচার্যদেবের ভক্তিগদগদ সার্টিফিকেট ও ছবি নিজেদের প্রচারমূলক বইতে ছেপে থাকেন। বিজ্ঞানাচার্য অলৌকিকের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতেন, এই দোহাই দিয়ে কি আমরা তবে অলৌকিকের মত অলীক, অন্ধ বিশ্বাসকে মেনে নেব? হ্যালডেন টেলিপ্যাথিতে বিশ্বাস করতেন, বিশ্বাস করতেন আত্মার অমরত্বে। তাই বলে কি আমরা তাঁর এইসব অদ্ভুত ছাই-পাঁশ চিন্তায় বিশ্বাস করব? যে কারণে তাঁদের এই অন্ধবিশ্বাসকে বিজ্ঞান মানে না, যুক্তি মানে না, আমরা মানি না, সেই একই কারণে তাঁদের ঈশ্বর বিশ্বাসও বিজ্ঞান মানে না, যুক্তি মানে না, আমরা মানি না।
একটি বিখ্যাত বাংলা পত্রিকায় সম্পাদকীয় কলমে ঈশ্বর বিশ্বাসের পক্ষে লেখা হয়েছিল, “চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের আগে ঈশ্বরের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানান, বিজ্ঞানী রকেটের মহাকাশ-যাত্রার সাফল্য কামনায় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন এ ঘটনা বিরল নয়।”
কিন্তু এই ধরনের কিছু ঘটনা কখনই ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ নয়। বড় জোর এটুকুই প্রমাণিত হতে পারে, ওই বিজ্ঞানীরা ঈশ্বরে বিশ্বাসী। কিন্তু তাতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণিত হচ্ছে কি?
আইনস্টাইন নিয়ে বিভ্রান্তি
এরপরও আইনস্টাইনের ঈশ্বর বিশ্বাস নিয়ে বাড়তি কিছু বলার প্রয়োজন অনুভব করছি। সম্প্রতি এদেশের জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রথম শ্রেণীর প্রচার মাধ্যমগুলো বিশ্বের সর্বকালের অনাতম মনীষা, আইনস্টাইনকে ‘ঈশ্বরে গভীর বিশ্বাসী’ বলে কোনও বিশেষ পরিকল্পনার ছক মাথায় রেখে যেভাবে চিত্রিত করে চলেছে, বাস্তব চিত্র কিন্তু আদৌ তা নয়। বরং প্রথমেই নির্দ্বিধায় জানিয়ে রাখি, আইনস্টাইন যে কোনও স্থূল কুসংস্কার, পৌত্তলিকতা, ধর্মীয় বিশ্বাস ও স্বর্গ-নরক মার্কা পাপ-পূণ্যবোধে আদৌ বিশ্বাসী ছিলেন না। এ’কথাও বলে রাখা ভাল, তিনি ঈশ্বর পরম বিশ্বাসী হলে, কখনই তাঁকে অন্যরকমভাবে চিত্রিত করতে সচেষ্ট করতাম না। কারণ ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ আইনস্টাইনের একান্ত ব্যক্তি বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল নয়। কারও ব্যক্তি বিশ্বাসের উপরই নির্ভরশীল নয়।
৫৫