পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

একশো পারসেণ্ট গ্যারাণ্টি দিচ্ছি। অসাম্যের সমাজ কাঠামো ভেঙে সাম্যের সমাজ গড়ার দার্শনিক আত্মোপলব্ধি নিয়ে, বঞ্চনা ও অবিচার সম্পর্কে দার্শনিক আত্মোপলব্ধি নিয়ে আপনি যদি অসুরের বিরুদ্ধে সুসংবদ্ধ সংগ্রামে নামেন, 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' বা ‘উগ্রপন্থী' তকমা আপনার দলের গায়ে সেঁটে দেওয়া হবে। প্রচারের অপার মহিমায় 'বিচ্ছিন্নতাবাদী' ও 'ক্রিমিনাল' শব্দ দুটি সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রিয়-পাঠক-পাঠিকা, একটু ভাবুন তো, একটা পচন ধরা সমাজে সৎ, আদর্শবাদী, সাম্যকামী মানুষরা বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য কি না? ‘বিচ্ছিন্নতা' কী? সাধারণের থেকে স্বতন্ত্র, সাধারণের থেকে আলাদা, সকলের সঙ্গে মানিয়ে না নিতে পারা। গ্যালিলিও থেকে বিদ্যাসাগর, প্রত্যেকেই সেই সময়কার সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানবগোষ্ঠীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।

 যে সমাজে দুর্নীতি সমুদ্রগভীর, যে সমাজে শাসকের গদিতে বসতে ধনকুবেরদের কাছে ভিক্ষাপাত্র ধরতে হয়, যে সমাজের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি কোন পথে চলবে, তা ঠিক করে দেয় টাকার কুমিররা, যে সমাজে বৈষম্য ও শোষণ লাগামছাড়া, সেই সমাজ থেকে কোনও জনগোষ্ঠী যদি বেরিয়ে যেতে চায়, তবে তাদের সেই উচ্চশির স্পর্ধিত সংগ্রামকে কুর্নিশ জানানই প্রতিটি বঞ্চিত মানুষের স্বাভাবিক অভিব্যক্তি হওয়া উচিত। কিন্তু সেই 'উচিত’টাই ঘটছে না শাসক ও শোষকশ্রেণীর সুনিপুণ মগজ ধোলাইয়ের কল্যাণে।

 সাহিত্যে নাটকে-পর্দায় এমন অনেক চরিত্র হাজির হয় যারা নৈরাশ্যতাড়িত, বিকারগ্রস্ত, একাকিত্বের শিকার এক মানসিক রোগী। মগজ ধোলাইয়ের কৃপায় শুধু এইসব নেতিবাচক চরিত্রগুলোকে সমাজ-বিচ্ছিন্ন বলে আমরা ধরে নিই। ফলে এই মগজ ধোলাইয়ের ফলস্বরূপ আমরা ভুলে থেকেছি ব্যাধিগ্রস্ত সমাজের বিরুদ্ধে আদর্শবাদী মানুষদের স্বাভাবিক প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং সংগ্রাম ও বিচ্ছিন্নতা। যে বিচ্ছিন্নতার অর্থ শোষণের অবসানমুখী সংগ্রাম, শোষণযুক্ত সমাজ থেকে বিযুক্ত হওয়ার তীব্র আকুতি, সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশমুখী চেতনা, সুস্থ আত্মবিকাশের চেতনা, সেই বিচ্ছিন্নতা অবশ্যই মানুষের কাম্য, মানবসভ্যতার কাম্য। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, এমন ক্ষেত্রে আপনি-আমি-আমরা কি মানব সভ্যতার অগ্রগতির স্বার্থে পচনধরা সমাজের বিরুদ্ধে কোনও জনগোষ্ঠীর বিচ্ছিন্নতার অধিকারকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করবো না? জনগোষ্ঠীর সংগ্রামগুলোর প্রতি সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেওয়াকে সমর্থন করবো না? অবশই করব।

O

যে বিচ্ছিন্নতার অর্থ শোষণের অবসানমুখী সংগ্রাম, শোষণমুক্ত সমাজ থেকে বিযুক্ত হওয়ার তীব্র আকুতি, সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশমুখী চেতনা, সুস্থ আত্মবিকাশের চেতনা, সেই বিচ্ছিন্নতা অবশ্যই মানুষের কাম্য

O

৬১