পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পড়েছিলেন। কেদারের পথে এক চড়াই অতিক্রম করার সময় সুজিতবাবু হার্টে ব্যথা অনুভব করেন। আত্মীয়-বন্ধুহীন এই তীর্যযাত্রায় সুজিতবাবুর একমাত্র সঙ্গী জীবনসঙ্গিনী সাহায্য পাওয়ার আশায় পাগলের মতই চিৎকার করতে থাকেন। এক সময় শ্রীমতী সেন দেখতে পেলেন এক সন্ন্যাসী ছুটতে ছুটতে আসছেন। মরণপথযাত্রী শ্রীসেনের সামনে দাঁড়িয়ে সন্ন্যাসী তাঁর মুখে প্রসাদ ও কমণ্ডুলের জল ঢেলে দিয়ে যেমন এসেছিলেন, তেমনই ছুটতে ছুটতে চলে গেলেন। একটু পরেই শ্রীসেন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শ্রীমতী সেন কাছাকাছি এক আশ্রমে আশ্রয় নিলেন। শ্রীসেনের 'শেষকাজ' শ্রীমতী সেনই করলেন আশ্রমের সন্ন্যাসীদের উপদেশ মতো। সন্ন্যাসীরা এই মৃত্যুকে আধ্যাত্মিক মহাপুরুষের মৃত্যু হিসেবে ধরে নিয়ে মৃতদেহ না পুড়িয়ে নদীর জলে ভাসিয়ে দিলেন। দু'দিন পরে শ্রীমতী সেন কেদারনাথ দর্শন করতে গিয়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়লেন। এ কী দেখছি? এই কি কেদারনাথ? ইনিই তো সেদিন সুজিতের মুখে জল ও প্রসাদ তুলে দিয়েছিলেন।

 শ্রীমতী সেন হিন্দু ধর্মে পরম বিশ্বাসী। দীর্ঘদিনের সংস্কার, তীর্থক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিবেশ, প্রচণ্ড মানসিক আঘাতের আবেগ ও সন্ন্যাসীদের আধ্যাত্মিক কথাবার্তা, শ্রীসেনকে ঈশ্বর কৃপাধন্য মহাপুরুষ হিসেবে সন্ন্যাসীদের ঘোষণা শ্রীমতী সেনের মধ্যে এই ধরনের অলীক দৃশ্যানুভূতির (Visual hallucination) সৃষ্টি করেছিল। শ্রীমতী সেন যদি পরম খ্রিস্ট ধর্মে বিশ্বাসী হতেন এবং খ্রীষ্টীয় পাদ্রীদের মুখে শুনতেন শ্রীসেন যীশুর পরম কৃপাধন্য, তবে দুর্গম পথযাত্রার শেষ কোনও চার্চে ঢুকে যীশুর মূর্তির মধ্যে মৃত্যুপথযাত্রী জীবনসঙ্গীর মুখে জল তুলে দেওয়া মানুষটিকেই দেখতে পেতেন।

 শ্যামলেন্দু রায় ব্যাঙ্ককর্মী। সুন্দরী তরুণী সুমনার সঙ্গে বিয়ে হয়। দু'জনেই দু'জনের প্রতি ছিলেন দারুণভাবে আকর্ষিত। কিন্তু বছর না ঘুরতেই শ্যামলেন্দু অফিস যাওয়ার পথে স্কুটার অ্যাকসিডেণ্টে মারা যান। শ্যামলেন্দুর ব্যাঙ্কে সুমনা চাকরি পান। সহকর্মী ধ্রুবকে ভালই লাগে। ধ্রুবও সমুনাকে চান, সেটুকু বুঝতে অসুবিধে হয় না। একদিন ধ্রুব বিয়ের প্রস্তাব দিলেন সুমনাকে। আর, সে রাতেই শুতে যাওয়ার আগে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে ক্লিনজিং মিল্ক দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে করতে সুমনা তাকালেন ড্রেসিং টেবিলে রাখা শ্যামলেন্দুর ছবির দিকে। আর অমনি স্পষ্ট শুনতে পেলেন শ্যামলেন্দুর গলা, তুমি আমাকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে, সুমনা?” তারপর থেকে প্রায়ই শ্যামলেন্দুর ছবি কথা বলে। এক সময় ছবিটা সরালেন। কিন্তু শ্যামলেন্দুর কথা বিদায় নিল না। শেষ পর্যন্ত হাজির হয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। শ্রবণানুভূতির অলীক বিশ্বাসের auditory hallucination) এই রোগী এই ধরনের কথা শুনতে পান।

 ৮৫-র কালীপুজোর সময় দমদম চিড়িয়ামোড়ের একটি প্যাণ্ডেলে আগুন

৬৭