পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লাগে। পুজোর উদ্যোক্তা তরুণরাই বন্ধ ঘরের মতো জ্বলন্ত প্যাভেল থেকে দর্শকদের উদ্ধার করেন। প্যাণ্ডেলে আগুন ঘেরার মধ্যে একজন ছিলেন আমারই বন্ধু-পত্নী। এই আগুন লাগার তিনদিন পর বন্ধু আমাকে ফোনে জানান ওর জীবনসঙ্গিনী নাকি মাঝে মাঝেই তীব্র আতঙ্কে চিৎকার করে উঠছেন। উনি নাকি দেখছেন ওঁর আশে-পাশে দপ্ করে আগুন জ্বলে উঠছে। এমন কি আগুনের তাপও নাকি স্পষ্ট টের পাচ্ছেন। আর এই ব্যাপারটা প্রধানত ঘটছে কোথাও আগুন দেখলেই।

 বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম। হিপটিক সাজেশনে তাঁকে আবার ঠিকও করে দিয়েছিলাম। কিভাবে ঠিক করেছিলাম, প্রসঙ্গ সেটা নয়। যে প্রসঙ্গে আসতে ঘটনাটা বললাম, সেটা হলো বন্ধু-পত্নী কেন হঠাৎ অলীক আগুন দেখতে পাচ্ছিলেন? তাপ অনুভব করতে পারছিলেন? মস্তিষ্কের বিশেষ গঠন-বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এই ধরনের আবেগপ্রবণ, সংবেদনশীল এবং মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের কম নমনীয়তা সম্পন্ন মানুষরা অনেক সময় নিজের অজান্তে স্বনির্দেশ (auto-suggestion) পাঠিয়ে অনেক অলীক কিছু দেখেন, অনেক অস্বাভাবিক সব কাণ্ডকারখানা ঘটিয়ে ফেলেন। দুর্ঘটনার দিন আগুনের ঘোরটোপে অনেকেই আটকে পড়েছিলেন সকলেই কিন্তু বন্ধু-পত্নীর মতো আগুন দেখছিলেন না; তাপ অনুভব করছিলেন না। বন্ধু-পত্নী দেখেছিলেন। কারণ তাঁর মস্তিষ্ক বৈশিষ্ট্য, মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের নমনীয়তা, আবেগপ্রবণতা বহুর তুলনায় নিশ্চয়ই অন্যরকম। আর তাইতেই আগুন দেখলেই দুর্ঘটনার স্মৃতি তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পিছু তাড়া করেছে—আর একটু হলেই শরীরটায় আগুন লেগে যেত। শরীরটা পুড়তে থাকত। অসহ্য তাপে ঝলসে যেত রূপ-যৌবন। আর একটু হলেই এমনটা হতো। উঃ, আগুন কী বীভৎস! কী ভয়ংকর! আগুনে পোড়া মানুষ বাঁচলেও তাকে আগুনের কাছেই জমা রেখে আসতে হয় রূপ-যৌবন! বন্ধু-পত্নী বাস্তবিকই সুন্দরী। আর সম্ভবত অনেকটা সেই কারণেই বন্ধু তাঁর জীবন-সঙ্গিনীকে আদরে-সোহাগে ঘিরে রাখতেই খুব বেশি পছন্দ করতেন। সোহাগের এমনতর কারণটা বন্ধু-পত্নীরও অজানা ছিল না। সৌন্দর্য সচেতন আবেগবশ মন তাই তীব্র আতঙ্কে বার-বার ভেবেছেন—আর একটু হলেই পুড়ে যেতাম! পুড়ে গেলে কী হতো! আগুন কী ভয়ংকর! আবার যদি কখনও আগুনে পুড়ি। সামান্য একটু অসতর্কতা থেকে আগুন কত ভয়ংকর সব দুর্ঘটনাই না লাগাতার ভাবে ঘটিয়ে চলেছে? একটু অসতর্কতা...আগুন...উঃ...বন্ধুপত্নী তীব্র আতঙ্ক থেকে অলীক দর্শন ও অলীক স্পর্শানুভূতির শিকার হয়েছেন।

 ঠিক এমনি ভাবে কেউ তীব্র আকুতি নিয়ে যদি ঈশ্বর দর্শন কামনা করতে থাকে, এবং যদি তার মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের নমনীয়তা কম থাকে এবং সে আবেগপ্রবণ হয় তবে তার পক্ষে অলীক ঈশ্বরদর্শন সম্ভব, অবশ্যই সম্ভব। ধরে নিলাম, রামবাবু পুজো-আর্চা করেন। ঈশ্বরে পরম বিশ্বাসী। মনে তাঁর

৬৮