সময় অথবা শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরের মন্দিরে দণ্ডী কাটতে কাটতে এমন অনুভূতি বা দর্শন সম্ভব। মহরমের মিছিলে কাচের টুকরো বা কাঁটা দু’হাতে নিয়ে হাসান-হসান বলে দু’বুক চাপড়াতে চাপড়াতে রক্তাক্ত করে তোলা মানুষদের কেউ কেউ অলীক অনুভূতির শিকার হন। এই সবই ধর্মীয় উন্মাদনা থেকে ঈশ্বর অনুভূতি ও অলীক অনুভূতির উদাহরণ।
রোগটার নাম কী বলব? স্কিটসোফ্রিনিয়া না স্কিজোফ্রেনিয়া? অনেকে আবার সিজোফ্রেনিয়াও বলে থাকেন। ইংরেজি বানানটা হল schizophrenia! আর সংসদের অভিধানে উচ্চারণ লেখা আছে স্কিটসোফ্রিনিয়া। আমারও না হয় বাংলায় লিখতে স্কিটসোফ্রিনিয়াই লিখব। হ্যাঁ, এই রোগও ঈশ্বর দর্শন সম্ভব এবং এই রোগের অনেক রোগী তা দেখেও থাকেন।
স্কিটসোফ্রিনিয়া রোগের বিষয়ে বোঝার সুবিধের জন্য একটু ছোট্ট করে আলোচনা সেরে নেওয়া জরুরি। গতিময়তা মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের একটি বিশেষ ধর্ম। সবার মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের গতিময়তা সমান নয়। যাদের গতিময়তা বেশি, তারা যে কোনও বিষয় চটপট বুঝতে পারে। বহু বিষয়ে জানার ও বোঝার আগ্রহ ও ক্ষমতা আছে। খুব সাবলীলভাবেই বিভিন্ন ধরনের কাজকর্মে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পারে এবং সহজেই এক প্রসঙ্গ থেকে অন্য প্রসঙ্গের চিন্তায় বা আলোচনায় নিজের মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষগুলিকে কাজে লাগাতে পারে। সাধারণভাবে রাজনীতিবিদ, শিল্পপতি, প্রশাসক শ্রেণীর মানুষদের মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের গতিময়তা বেশি। এই ধরনের মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের অধিকারীদের বলা হয় প্রাণচঞ্চল বা স্যাংগুইনাস (Sanguineous)।
চিন্তাবিদ, গবেষক, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী শ্রেণীর মানুষরা সাধারণভাবে কোনও বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে ভালবাসেন। সবকিছুকে ভালমতো জানতে চান, বুঝতে চান। একই সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে ভালোবাসেন না। এরা আত্মস্থ বা ফ্লেমেটিক (Phlegmatic) ধরনের মস্তিষ্কের অধিকারী।
স্কিটসোফ্রিনিয়া রোগের শিকার হন সাধারণভাবে আত্মস্থ ধরনের মস্তিষ্কের অধিকারীরা। তারা কোনও কিছু গভীরভাবে চিন্তা করতে গিয়ে সঠিকভাবে চিন্তার মূলে পৌঁছতে না পারলে, অথবা কোনও সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেও সমাধানের পথ না পেলে, অথবা কোনও রহস্যময়তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে করতে অতি আবেগপ্রবণতার দরুন রহস্যময়তা থেকে নিজেকে বের করে আনতে না পারলে তাদের মস্তিষ্কের গতিময়তা আরও কমে যায়। তখন তারা আরও বেশি করে নিজের চিন্তার মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নেবার চেষ্টা করে। মস্তিস্কের চালককেন্দ্র (motor centre) এবং সংবেদনকেন্দ্র (sensorium) ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে থাকে, শ্লথ হতে থাকে, অনড় হতে থাকে। এর ফলে এরা প্রথমে বাইরের কর্মজগৎ থেকে, তারপর নিজের পরিবারের
৭০