পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ৩০ মে ’৯০। আনন্দবাজার পত্রিকায় বহুবর্ণের তিনটি ছবি সহ একটি বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশিত একটি হলো “পূজারিণীর শরীর বেয়ে” শিরোনামে। শিরোনামের তলায় গোদা বড় হরফে ছাপা “দেবদেবীর ভর হয় পূজারিণীর শরীরে। সে সময় যা বলা যায় তাই মেলে। যা দাওয়াই দেওয়া হয় তাতেই রোগ নির্মূল হয়। ভর হয় কীভাবে?” উৎসাহী পাঠকদের অবগতির জন্য প্রতিবেদনটি এখানে তুলে দিচ্ছি:

 শনিবার বেলা দুটো। ঢাকুরিয়া স্টেশনের পাশে তিন-চার হাত উচু ছোট্ট একটি কালীমন্দির। মন্দিরের মাথায় চক্র ও ত্রিশূল। মন্দিটির নাম ‘জয় মা রাঠের কালী’। মন্দিরের সামনে একটি সিমেন্টের বাঁধানো চাতাল। সেই চাতাল ও পাশের মাঠে ইতস্তত ছড়ানো অনেক লোক। আর সেই দাওয়ার ওপর চিৎ হয়ে শুয়ে এক যুবতী, পরনে লাল পাড় সাদা শাড়ি এলোমেলো, চোখ দুটি বোজা, নাকের পাটা ফোলা, মুখের দুপাশে ক্ষীণ রক্তের দাগ। মহিলাটির ভর হয়েছে। কালী পুজো করতে করতে অচেতন হয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়েন মহিলা মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। হঠাৎ মহিলা বলে উঠলেন, ‘স্বামীর লগে এয়েছিস কে?’ উপস্থিত জনতার মধ্যে সাড়া পড়ে গেল। শাঁখা-সিঁদুর মাঝবয়সী এক আধা-শহুরে মহিলা ঠেলাঠেলি করে সামনে এলেন। মন্দিরে ছোট দরজার সামনে হাঁটু মুড়ে বসে ‘মা’ বলে হাতজোড় করে ডাকতে লাগলেন। ‘মা’ বললেন-‘সব ঠিক হয়ে যাবে। কিচ্ছু হবে না আমার জল পড়া খাইয়েছিস?’

 ‘খাইয়েছি মা। সারছে না মা।’

 ‘এতেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’

 এরপর ‘মা’ উঠলেন, “ব্যবসার জন্য এয়েছিস কে? বোস। আমার কাছে আয়?” শার্ট-প্যান্ট পরা মাঝবয়সী ব্যক্তি এগিয়ে এলেন। একইভাবে—হাতজোড়। হাঁটু মুড়ে বসা। মায়ের কাছে সমস্যার কথা জানালেন। মা অভয় দিলেন। ভদ্রলোক চলে গেলেন। ফের ‘মা’ ডাকলেন। ‘কোমরে পিঠে পেটে ব্যথার জন্য এয়েছিস কে? আয়, আয় সামনে আয়।’

 এক এক করে ছেলে মেয়ে বুড়ো মাঝবয়সী সবাই হাজির হতে লাগল। মা তাদের কোমরে, পিঠে পেটে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। তারা এক এক করে চলে গেলে একটি যুবক এগিয়ে এল। ‘মা’ তার পেটে হাত বুলিয়ে দিলেন নাভিতে হাত রাখলেন। ‘মা’য়ের মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এল। মায়ের ‘ঝাড়া’র রকমই এই।

 ‘সন্তানের লগে এয়েছিস কে?’ যুবকটি চলে যেতেই ‘মা’-য়ের ডাক। শিশুকোলে এক রমণী এগিয়ে এলেন। ‘মা’ শিশুটাকে তাঁর বুকের ওপর শুইয়ে দুই হাতে সজোরে শিশুটির পিঠের ওপর চড় মারতে লাগলেন। তারপর শিশুটিকে দুহাত দিয়ে উচু করে তুলে ধরলেন এবং আবার চড় মারতে লাগলেন, এরপর ‘মা’ শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।

৭৩