পাতা:আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করিনা - প্রবীর ঘোষ.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তবে ‘ভর’ নিয়ে যারা ব্যবসা চালায় তারা সাধারণভাবে মানসিক রোগী নয়; প্রতারক মাত্র।

 ভর-লাগা মানুষদের জলপড়া, তেলপড়ায় কেউ কেউ রোগমুক্তও হন বটে, কিন্তু যাঁরা অবিশ্বাসী তাঁদের ক্ষেত্রে এসব সামান্যতমও কাজ করে না। কাজ করে তাদেরই কারো কারোর উপর, যাঁরা ভর লাগা মানুষদের প্রতি অন্ধবিশ্বাসী। রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে বিশ্বাসবোধের গুরুত্ব অপরিসীম। হাড়ে, বুকে বা মাথায় ব্যথা, বুক ধড়ফড়, পেটের গোলমাল, গ্যাসট্রিকের অসুখ, ব্লাডপ্রেসার, কাশি, ব্রঙ্কিয়াল-অ্যাজমা, ক্লান্তি, অবসাদ ইত্যাদি রোগের ক্ষেত্রে রোগীর বিশ্বসবোধকে কাজে লাগিয়ে ওষুধ-মূল্যহীন ক্যাপসুল, ইঞ্জেকশন বা ট্যাবলেট প্রয়োগ করে অনেক ক্ষেত্রেই ভাল ফল পাওয়া যায়। একে বলে ‘প্ল্যাসিবো’ চিকিৎসা পদ্ধতি।

 ‘যা বলা যায় তাই মেলে’—এক্ষেত্রে কৃতিত্ব কিন্তু ভর লাগা মানুষটির নয়; কৃতিত্ব তাঁর খবর সংগ্রহকারী এজেন্টদের।

 না, সাবর্ণী দাশগুপ্ত বা ভরে পাওয়া পূজারিণীদের কেউই আজ পর্যন্ত আমার বা আমাদের যুক্তিবাদী সমিতির কাছে এগিয়ে আসেননি। কারণটা শ্রদ্ধেয় পাঠকরা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন। একই সঙ্গে প্রিয় পাঠকদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যে কোনও ঈশ্বর ভরের খবর আমাদের সমিতির যে কোনও শাখায় দিলে প্রমাণ করে দেব-প্রতিটি ভরগ্রস্তই হয় মানসিক রোগী, নতুবা প্রতারক।


 মনসা, শীতলা, কালী, তারা, দুর্গা, চড়কের সময় শিব, কীর্তনের আসরে রাধা বা গৌরাঙ্গের ভর, পীরের ভর, জিন বা পরীর ভর, অপদেবতার ভর, ভূতে ভর ইত্যাদি কত রকম ভরই যে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। যে কোনও ধরনের ভর হওয়া মানুষগুলোর বেশিমাত্রায় খোঁজ মিলবে মফস্বলে, গ্রামে-গঞ্জে। শহর কলকাতাতেও অবশ্য ভর হয়। শিক্ষার সুযোগ লাভে বঞ্চিত হতদরিদ্র বস্তিবাসীদের মধ্যে ভুতে ভর, জিনে ভরের মানসিক রোগীদের সাক্ষাৎ এখনও মেলে। কিন্তু যেটা অনেকেরই অজানা, সেটা হলো এই কলকাতা, হাওড়া ও দমদম অঞ্চলে বহু ঈশ্বরে ভর হওয়া মানুষের রমরমা ব্যবসা চলছে। এইসব ভরগ্রস্তদের বেশির ভাগই নারী। আর এদের কৃপাপ্রার্থীদের মধ্যে মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এবং বিত্তশালীদের দেখা পাবেন। এই ভক্তরা প্রত্যেকেই কম বেশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত। এই শহরের ঈশ্বরে ও পীরে ভরগ্রস্তদের প্রায় সকলেই প্রতারক, মানসিক রোগী নয়। ভরগ্রস্ত কেউ এই বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করলে অবশই প্রমাণ করে দেব—এরা বাস্তবে কেউ ঈশ্বরজাতীয় কারও এজেন্ট নয়, এরা কারও বিষয়ে ভূত-ভবিষ্যৎ বলতে পারে না, পারে না রোগমুক্তি ঘটাতে। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে ভরগ্রস্ত বা কোনও অলৌকিক ক্ষমতাধর ( ! ) পাঁচ হাজার টাকা জমা দিলে প্রকাশ্যে তার মোকাবিলা করব। এবং আমি পরাজিত

৭৭