হলে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ও জামানতের পাঁচ হাজার টাকা, অর্থাৎ মোট এক লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার টাকা দেব।
এতো গেল ‘ভর’ ব্যাপারটাই যে ফালতু, এটা প্রমাণ করতে চ্যালেঞ্জ ট্যালেঞ্জের কথা। কিন্তু ভর ব্যাপারটা তবে ঠিক কী? আসুন, এবার সেই বিষয় নিয়ে আলোচনায় ঢুকি।
১৯৬৬ সালের মে মাসের ২৭ তারিখ। স্থান—রাঁচীর উপকণ্ঠের পল্লী। সময়-সন্ধ্যা। নায়িকা এক কিশোরী। কোথাও কিছু নেই, বাড়ি ফিরে হঠাৎ প্রচণ্ড মাথা দোলাতে দোলাতে শরীর কাঁপতে কাঁপাতে কী সব আবোল-তাবোল বকতে লাগল।
সন্ধেবেলায় জল আনতে গিয়েছিল। ফিরে আসার পর থেকেই এমনটা ঘটছে। নিশ্চয়ই ভূতে ধরেছে। শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া গরিব পরিবার। ওরা ভরের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সাহায্য নেয় না। সাহায্য নেয় ওঝার। এক্ষেত্রেও তাই হলো। ওঝা এসে কাঠকয়লার আগুন জ্বেলে তাতে ধুনো, সরষে আর শুকনো লঙ্কা ছড়াতে শুরু করল। সেই সঙ্গে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গি করে মন্ত্র-পাঠ। মেয়েটি কঠিন গলায় ওঝাকে ধমক দিয়ে ওর লাফালাফি বন্ধ করতে বলল। ওঝা তাতে বিন্দুমাত্র ঘাবড়াল না। ওঝা জানে, ভর করা ভূতেরা চিরকালই ক্ষুব্ধ হয়। অতএব ভূতের রাগে ওঝার উৎসাহ তো কমলই না, বরং দ্বিগুণ উৎসাহে মন্ত্রসহ নাচানাচি করতে শুরু করল।
কিশোরীটি এবার গম্ভীর গলায় জানাল, সে ভূত নয়, ‘বড়ি-মা’ অর্থাৎ দুর্গা। ওঝা আর বেয়াদপি করলে শাস্তি দেবে। ওঝা ভূতেদের অমন অনেক ভড়কি দেওয়া দেখেছে। ভূতের ভয়ে পালিয়ে গিয়ে নিজের সম্মান ও রোজগারের পায়ে কুড়ল মারতে রাজি নয়। সে তার কাজ-কর্ম চালিয়ে যেতে লাগল। ওঝা এক সময় মন্ত্র পড়া-সরষের কিছুটা কাঠকয়লার আগুনে আর কিছুটা কিশোরীটির গায়ে ছুঁড়ে মারতেই কিশোরীটি অগ্নিকুণ্ড থেকে টকটকে লাল একমুখো জ্বলন্ত কাঠকয়লা হাতে তুলে নিয়ে ওঝাকে বলল, “এই নে ধর প্রসাদ।” ওঝার হাতটা মুহূর্তে টেনে নিয়ে ওর হাতে উপুড় করে দিল জ্বলন্ত কাঠকয়লা।
যন্ত্রণায় তীব্রতায় ওঝা চিৎকার করে এক ঝটকায় হাত উপুড় করে কাঠকয়লাগুলো ফেলে দিলে। মেয়েটি কিন্তু নির্বিকার। ওঝার থেকে বেশিক্ষণ জ্বলন্ত কাঠকয়লা হাতে রাখা সত্ত্বেও ওর চোখে-মুখে যন্ত্রণার সামান্যতম প্রকাশ দেখা গেল না। এমনকি হাতে ফোস্কা পর্যন্ত নয়। উপস্থিত প্রতিটি দর্শক এমন অভাবনীয় ঘটনায় হতচকিত। এ মেয়ে ‘বড়ি-মা’ না হয়েই যায় না। প্রথমেই নতজানু হয়ে মার্জনা ভিক্ষা করল ওঝাটি। তার বশ্যতা স্বীকারে প্রত্যেকেরই বিশ্বাস দৃঢ়তর হলো।